Pompeii City: আর পাঁচটা শহরের মতই এই শহরও ছিল সাজানো গোছানো সমৃদ্ধশালী একটি শহর। ছোট হলেও শহরের বাড়িঘরগুলি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে বানানো হয়েছিল। বিশেষ করে বিলাসবহুল মানুষদের ভবনগুলো ছিল দেখার মতো। ভবনগুলির নির্মাণশৈলী এবং নানান কারুকার্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল।
শহরের রাস্তাগুলো ছিল রূপকথার গল্পের মত। মানুষজনের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাজপথগুলি প্রশস্ত করে বানানো হয়েছিল। বড় বড় ব্যাসল্ট পাথর বয়ে নিয়ে এসে রাস্তা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। শাখা-প্রশাখা রাস্তাগুলি দিয়ে প্রধান রাস্তার সঙ্গে ব্যক্তিগত বা সরকারি ভবনগুলোকে যুক্ত করা হয়েছিল।পথচলতি মানুষের মনোরঞ্জন ও সুবিধার কথা ভেবে রাস্তার পাশে সুদৃশ্য ফোয়ারা এবং পথনির্দেশ বোর্ডের আয়োজন করা ছিল।
এছাড়া, শহরবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শহরকে ঘিরে একটি উঁচু প্রাচীর দেওয়া হয়েছিল। এই প্রাচীর ছিল ব্যাসল্ট পাথরের তৈরি। প্রাচীরের বেষ্টনীর মধ্যে ছিল সুপরিকল্পিত মূল শহর। ক্লাসিক গ্রিড সিস্টেম অনুযায়ী শহরের বাড়িঘরগুলি সাজানো হয়েছিল, যাতে মানুষজন শহরের এপাশ থেকে ওপাশ অনায়াসেই যাওয়া-আসা করতে পারে।
তবে, অভিজাত এই শহরের মাটি ছিল লাভা দিয়ে গঠিত উঁচু মালভূমি প্রকৃতির। শহরের একপাশে ছিল নেপলস উপসাগর আর অন্য পাশে ভয়ানক জীবন্ত ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি পর্বত। এই অঞ্চলে মাঝে মধ্যে ভূমিকম্প হত, কিন্তু ছোটখাটো ভূকম্পনে খুব একটা বিচলিত হত না এখানকার মানুষ। ভয় ছিল শুধুমাত্র ওই দানবীয় ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরিকে ঘিরে।
আরও পড়ুন – আবিষ্কার হল নতুন প্রজাতির মাছ, নাম রাখা হল ভারতেরই এক শহরের নামে
আর সেই ভয়কে সত্যি করে একদিন ভয়াল বিপর্যয় নেমে এল নগরীর বুকে। সময়টা ছিল খ্রিস্টীয় ৭৯ শতাব্দের অক্টোবর মাস। ভিসুভিয়াস পর্বতের আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে শুরু হল ভয়ংকর অগ্নুৎপাত। সঙ্গে রিখটার স্কেলে ৫ থেকে ৬ তীব্রতার ভূকম্পন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের এমন জোড়া আঘাতের জন্য মোটেই তৈরি ছিল না শহরবাসী।
সাজানো গোছানো শহরের বুকে আছড়ে পড়ল একের পর এক প্রকাণ্ড আগুনের গোলা। ভলক্যানিক অ্যাশ আর ঝামাপাথরের পুরু আস্তরণে ঢাকা পড়ল প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের আশ্রয়স্থল। টানা দুদিন ধরে চলেছিল প্রকৃতির এই ভয়ঙ্কর লীলা। প্রাণ বাঁচাতে বহু মানুষ পালাতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ শহরবাসীর সমাধি হয়েছিল তপ্ত ছাই আর পাথরের নিচে।
এভাবেই প্রায় ১৭০০ বছর থাকার পর ১৭৪৮ সালে কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক ইতালির কম্পানিয়া প্রদেশে এসে পৌঁছান। তাঁদের উদ্যোগে সেই ধ্বংসস্তূপের মাটি সরানোর কাজ প্রথম শুরু হয়। খননের এক এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসতে থাকে প্রাচীন ইতালির পম্পেই শহরের (Pompeii City) আস্ত বাড়িঘর আর প্রস্তরীভুত অসংখ্য মানব কঙ্কাল। বোঝা যায়, অক্ষত আছে প্রায় সবকিছুই। ভিসুভিয়াসের ছাই আর আগুন অসহায় নগরবাসীকে পুড়িয়ে মারলেও মহান পম্পেই শহরকে সে আদৌ ক্ষতি করতে পারে নি।