কেউ আনন্দে আত্মহারা হয়ে চোখের জল ঝরান, তো কেউ আবার কষ্টে। চোখ দিয়ে জল যে কারণেই ঝরুক না কেন, এই জলে কিন্তু আছে আশ্চর্য ক্ষমতা। চোখের জল অত্যন্ত মূল্যবান। তবে তা মানুষের চোখের জল নয়, ‘মরুভূমির জাহাজ’ বলে খ্যাত উটের চোখের জল। অন্তত তেমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি বিকানিরের ‘ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন ক্যামেল’-এর (এনআরসিসি) বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, উটের অশ্রুজলে লুকিয়ে আছে আশ্চর্য এক ঔষধি ক্ষমতা। গবেষণায় দেখা গেছে, উটের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি আর চোখের জল খুব সহজেই সাপের বিষকে প্রতিহত করতে পারে। এমনকি, ২৬ টা সাপের বিষকেও অনায়াসে নির্বিষ করার ক্ষমতা রাখে একফোঁটা উটের চোখের জল। ব্যাপারটা অবাস্তব মনে হলেও এটাই চরম সত্যি বলে দাবি করছেন এনআরসিসি-র বিজ্ঞানীরা।
ফলে, এই গবেষণা যদি সফল হয়, তবে ভবিষ্যতে সর্প-দংশনের চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এনআরসিসি-র গবেষকরা সম্প্রতি এ বিষয়ে উটের ওপর নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন। একটি প্রতিবেদন সুত্রে জানা যাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা প্রথমে কার্পেট ভাইপার বা বোড়া সাপের বিষ দিয়ে একটি টিকা তৈরি করে তা উটের শরীরে ব্যবহার করেন। তারপর উটের শরীর থেকে সিরাম আর অশ্রু থেকে অ্যান্টিবডির নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করেন। দেখা গেছে, এই অ্যান্টিবডিগুলি সাপের বিষের কার্যকারীতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, সাপের কামড়ে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বাধার যে প্রবণতা থাকে, তা উল্লেখযোগ্যভাবে রোধ করতে সক্ষম হয়েছে এই অ্যান্টিবডি।
আরও পড়ুন – প্রশ্ন করতেই ‘জব্দ’ চ্যাটজিপিটি বা মেটা এআই, দিতে পারল না সঠিক উত্তর

সাধারণত ঘোড়া বা ভেড়ার মত প্রাণীদের শরীরে সাপের বিষ প্রবেশ করিয়ে অ্যান্টিভেনম বা সাপের কামড়ের প্রতিষেধক তৈরি করা হয়। তবে এই পদ্ধতিতে প্রতিষেধক উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি এবং জটিল। তবে এনআরসিসি-র বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন উট থেকে যে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় তা অনেক সাশ্রয়ী এবং সংগ্রহের প্রক্রিয়াও তুলনামুলকভাবে অনেক সহজ। উপরন্তু এটি ঘোড়ার শরীর থেকে তৈরি প্রচলিত অ্যান্টিভেনমের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। গবেষকদের ধারণা, উটের তৈরি অ্যান্টিবডি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
চিকিৎসা জগৎ ছাড়া এই আবিষ্কার উট-পালনকারী কৃষকদের সামনে উপার্জনের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কারণ, অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ শুরু হলে উটের চোখের জল এবং ব্লাড স্যাম্পল সংগ্রহের চাহিদা বাড়বে। আর সেই চাহিদা মেটাতে যোগান মিলবে একমাত্র এই কৃষকদের কাছ থেকেই। তাই উটের চোখের জল বিক্রি করে বিকানীর, জয়সলমির এবং যোধপুরের মত অঞ্চলে উট-প্রতিপালনকারীরা অতিরিক্ত উপার্জনের সুযোগ পাবেন। বিভিন্ন বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে উটের তৈরি অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন – ৩০ বছর পর ফিরল উলার হ্রদের পদ্ম, বর্ষার মরসুমে কাশ্মীর উপত্যকা ভরল গোলাপী রঙের বাগিচায়
ভারতের মত দেশে, যেখানে প্রতি বছর সাপের কামড়ে প্রাণ হারান, এই আবিষ্কার ফলপ্রসূ হলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পেতে সুবিধা হবে। কম খরচে কার্যকরী ওষুধের প্রয়োগের সুযোগের সাথে প্রাণ বাঁচবে অনেকের সেই আশাই করছেন বিজ্ঞানীরা।
তথ্য সূত্র: এনডিটিভি রাজস্থান এবং মানিকন্ট্রোল