দেখতে দেখতে কেটে গেল ৩০ টা বছর। দেখা মেলে নি তার। অনেকে ভেবেছিল আর কোনদিন হয়তো মিলবে না দেখা। ১৯৯২ সালে ভয়াবহ বন্যায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল সব। তবে প্রকৃতির খেয়াল অন্যরকম। যা হারিয়ে যায় তা আবার ফিরে আসে প্রকৃতিরই খেয়ালে। ঠিক তেমনটাই ঘটলো এখানে। প্রায় তিন দশক পর আবার ফিরল কাশ্মীরের উলার হ্রদের পদ্ম। বর্ষার মরসুমে উপত্যকা ভরে গেল সারি সারি গোলাপী রঙের বাগিচায়।
গত বছরও কিছু ফুল ফুটেছিল। তবে এত ব্যাপক হারে পদ্মফুল হ্রদের জলে গত ৩০ বছর দেখা যায়নি। এবার তা হয়েছে। গত বছর স্থানীয় মানুষজন যখন দেখলেন হ্রদের জলে বেশ কিছু পদ্মফুল ফুটে আছে, তখন তারা আরও বেশি করে বীজ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফলে ফুটেছে এত পদ্ম। তবে উলার হ্রদে এতদিন কেন ফোটেনি এত ফুল?
স্থানীয় মানুষজন বলছেন, বন্যার জমা পলি পরিষ্কারের ফলেই এত ফুল ফোটা সম্ভব হয়েছে এবার। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাশ্মীরে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। সেই বন্যার জলের পলিমাটি জমে ঢাকা পড়ে যায় উলার হ্রদের সমস্ত পদ্মফুলের বাগান। নষ্ট হয় হ্রদের বাস্তুতন্ত্র। আর বাগান নষ্ট হওয়ার সাথে জীবিকাও হারান স্থানীয় অসংখ্য মানুষ।
বহুদিন পর ২০২০ সালে উলার কনজার্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটির (WUCMA) উদ্যোগে হৃদের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়। সেই উদ্যোগের একটা অংশ ছিল জমা পড়া পলি সরানোর কাজ। কাজের অগ্রগতি হতেই ফল মেলে হাতেনাতে। স্বাভাবিক হতে শুরু করে একসময় বন্যার জলে হারিয়ে যাওয়া হ্রদের বাস্তুতন্ত্র। উপত্যকা জুড়ে আবার ফুটে উঠতে শুরু করে রাশি পদ্মফুলের বাগিচা।
আরও পড়ুন – Pompeii City: অগ্নুৎপাতের গ্রাসে গোটা শহর, প্রায় ২ হাজার মানুষের সমাধি হল ছাই আর পিউমিস পাথরের নিচে
উলার হ্রদে পদ্মফুল ফোটায় মুখে হাসি ফিরে এসেছে হ্রদের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের। বিশেষ করে পদ্মফুলের কান্ড বিক্রি করে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা খুব খুশি। দীর্ঘ ৩০ বছর পর আবার পুরনো জীবিকা ফিরে পাওয়ার আনন্দে তাঁরা আত্মহারা। পদ্মফুলের কাণ্ডকে স্থানীয় ভাষায় নাদারু বলা হয়। এই নাদারু এখানকার মানুষ সুস্বাদু খাবার তৈরির কাজে ব্যবহার করেন। অনেক মানুষ হ্রদ থেকে নাদারু সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। তাই উলার হ্রদে আবার পদ্মফুল ফোটায় স্বাভাবিকভাবেই উপার্জনের রাস্তা খুলে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
শ্রীনগর থেকে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার দূরে বন্দিপোরা এবং সোপো শহরের মধ্যে অবস্থিত উলার হ্রদ হল এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ মিষ্টি জলের হ্রদ। কুয়াশাচ্ছন্ন হরমুখ পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত এই মনোরম হ্রদের দৃশ্য দেখার জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন এখানে। বর্ষার মরসুমে উলার হ্রদ তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আশায় খুশির হাওয়া পর্যটক মহলেও।
আরও পড়ুন – Seine River Paris: ১০০ বছর পর আবার সাঁতার কাটার সুযোগ মিলল এই নদীতে, কারণ জানলে চমকে উঠবেন