যে কোনো প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এখন আর কঠিন কিছু নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সৌজন্যে সহজ হয়েছে অজানাকে জানার। হাতের সামনেই আছে চ্যাটজিপিটি, গ্রোক কিম্বা মেটা এআই জাতীয় প্ল্যাটফর্মগুলো। একবার লগইন করে শুধু নিজের প্রশ্নটা করে ফেললেই হল। তৎক্ষণাৎ পাওয়া যাবে উত্তর। এতদিন যেগুলি জানার জন্য আমাদের গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিনের উপর ভরসা করে থাকতে হত, এআই এর দৌলতে এখন তা হাতের মুঠোয়।
কি কি বিষয়ে দক্ষ এই ভাষা মডেলগুলো? এক কথায় বলতে গেলে এমন কিছু বিষয় নেই যে এই মডেলগুলো বলতে বা ব্যখ্যা করতে পারে না। চ্যাটজিপিটি-র কথাই ধরা যাক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর এই ভাষা মডেলের জ্ঞান অনেক বিস্তৃত। ইতিহাস, ভূগোল, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, রাজনীতি, সাহিত্য ও লেখালেখি থেকে শুরু করে রান্না, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, প্রভৃতি খুঁটিনাটি হাজারো বিষয়ের উপর তার দক্ষতা অনেক গভীরে।
বস্তুত, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অফুরন্ত তথ্যভাণ্ডার, বই, প্রবন্ধ, গবেষণা, সংবাদ এবং বহু মানুষের লেখা এবং কথার মাধ্যমে সে সমৃদ্ধ ও প্রশিক্ষিত। দিনের পর দিন নতুন নতুন তথ্যের মাধ্যমেও সে আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই বিপুল জ্ঞানের ভান্ডার থেকে তাই সহজেই সে আমাদের করা প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে বলে দিতে পারে।
তবে এআই সিস্টেমগুলি তথ্যচালিত হলেও, এই অপরিসীম জ্ঞানের সীমাবদ্ধত আছে। চ্যাটজিপিটি বা অন্য কোন ভাষা মডেলকে যা খুশি তাই জিজ্ঞেস করলে যে সবসময় সদুত্তর পাওয়া যায় তেমনটাও কিন্তু নয়। বেশ কিছু ধরনের প্রশ্ন আছে যার উত্তর দেওয়া এআই-এর পক্ষে একরকম মুশকিল। কি সেই প্রশ্ন?
সহজ করে বললে, যে প্রশ্নগুলি মানুষকে ভাবতে শেখায়, কল্পনাকে আশ্রয় করে যা মানুষকে অনুধাবন করতে শেখায়, সেইখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমাবদ্ধতা ধরা খায়। এআই এখনো কল্পনা করতে শেখেনি। তাই কল্পনানির্ভর প্রশ্নের সঠিক জবাব তার কাছে পাওয়া যায় না। আবার, যেসব প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা, আপেক্ষিক অথবা অস্তিত্বহীন, সেইসব প্রশ্নের সদুত্তর সে দিতে হোঁচট খায়।
যেমন ধরুন, এআই (AI)-কে যদি প্রশ্ন করা হয় ‘পৃথিবীর বাইরে এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসীরা আছে কি?’, তাহলে তার উত্তর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে নির্ভুলভাবে বা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ, বৈজ্ঞানিকভাবে এলিয়েনদের অস্তিত্ব সম্পর্কে এখনো অবধি নিশ্চিত করে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
আবার যদি এরকম প্রশ্ন করা হয়, ‘এই জগতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব কি আছে? থাকলে তা কোথায়?’ প্রথম প্রশ্নের মত এই প্রশ্নেরও কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক, নিরপেক্ষ ও প্রমাণযোগ্য উত্তর না থাকায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষেও নির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।
তাহলে কি দাঁড়াল? এআই-এর সীমাবদ্ধতা কোথায়? আসলে ভবিষ্যতের কোন ঘটনা ঘটবে, ব্যক্তিগত বা গোপন তথ্য, ধর্ম বা দর্শন বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না এআই। আবার বিশ্বাসভিত্তিক চরম সত্য এবং অস্তিত্বহীন, কাল্পনিক জিনিসের বাস্তব ব্যাখ্যাও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এই সব প্রশ্নের উত্তরে সে কেবল উপলব্ধ তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে অনুমান করতে পারে মাত্র। তাছাড়া, চিকিৎসা বা আইনি পরামর্শের ক্ষেত্রেও এআই নির্ভরযোগ্য নয়। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে ভরসা সেই পেশাদার পরামর্শ।
কতটা সমৃদ্ধ এআই-এর জ্ঞানের ভান্ডার? এক কথায় তথ্যভিত্তিক, বিশ্লেষণধর্মী, ভাষা ও লেখালেখি সম্বন্ধীয় বিষয়, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইতিহাস, শিক্ষা, কোডিং, সাধারণ জ্ঞান এবং সৃজনশীল চিন্তামূলক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এআই। এবং তা ব্যাখ্যাসহ সহজ সরল ভাষায়।