LSST Cam: প্রায় ৩২০০ মেগাপিক্সেলের এই ক্যামেরা হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরা। নাম এলএসএসটি ক্যামেরা (LSST Camera)। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই ক্যামেরা তৈরি হতে সময় নিয়েছে প্রায় দু-দশক। এই ক্যামেরা এতটাই শক্তিশালী যে, ২৫ কিলোমিটার দূর থেকেও একটি ছোট গল্ফ বলকে বড় গোল চাকতির মত দেখায়। সম্প্রতি এই ক্যামেরার লেন্সেই ধরা পড়েছে রাতের আকাশে সৌরজগতের এক দুর্লভ দৃশ্য।
চিলির আন্দিজ পর্বতমালার কেরো পাঁচো পাহাড়ের উপর অবস্থিত ভেরা সি রুবিন মানমন্দিরে গত এপ্রিলে বসানো হয়েছিল ক্যামেরাটি। এটি মূলত একটি বিশাল আকারের লার্জ সিনপট্রিক সার্ভে টেলিস্কোপ ক্যামেরা (LSST Cam)। যার কাজ হল আগামী ১০ বছর ধরে দক্ষিণ গোলার্ধের মহাকাশের বিস্তারিত ছবি তোলা এবং টাইম ল্যাপস রেকর্ড করা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এলএসএসটি ক্যামেরা মহাবিশ্বের ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির খোঁজ করবে।
কি এই ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি? সহজ করে বলতে গেলে ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি হল মহাবিশ্বের দুটি রহস্যময় উপাদান। বস্তুত, মহাবিশ্বের প্রায় ৯৫ শতাংশই এই এই দুটি উপাদান দিয়ে গঠিত। বাকি ৫ শতাংশের মধ্যে আছে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাকি যা কিছু যেমন, গ্যালাক্সি, গ্রহ, নক্ষত্র, ধুমকেতুর এবং আলো। মজার বিষয় হল, ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি আদতে অদৃশ্য হওয়া সত্ত্বেও মনে করা হয় যে মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তনে এদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এর রহস্যময় বস্তুদুটির কোনও বিস্তারিত তথ্য নেই। আর এখানেই আসছে রুবিন টেলিস্কোপের গুরুত্ব। প্রায় ২ হাজার ৮০০ কিলোগ্রাম ওজনের অত্যাধুনিক এই মহাকাশ পর্যবেক্ষণ যন্ত্র সেই রহস্যময় ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটারকে অনুসন্ধান করার জন্য চেষ্টা চালাবে।

রুবিন টেলিস্কোপের কার্যক্ষমতা অনেক বেশি উন্নত। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির লেন্স এবং মিরর ডিজাইনের সাহাজ্যে এই ক্যামেরা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। এর ক্যামেরা এতটাই শক্তিশালী এবং সংবেদনশীল যে, মাত্র কয়েকটি রাতের মধ্যেই সমগ্র আকাশের ছবি সে তুলে নিতে পারে। উপরন্তু, পরিবর্তনশীল মহাজাগতিক বস্তুগুলিকে যাতে আরো সূক্ষ্মতার সঙ্গে এবং কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় তার জন্য এই টেলিস্কোপ রাতের আকাশের একটি আল্ট্রা ওয়াইড ও হাই ডেফিনিশন টাইম-ল্যাপস ভিডিও তৈরি করে দিতে পারদর্শী। ফলে, এই ভিডিওগুলি পরে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু বা ঘটনাকে সনাক্ত করার সুযোগ থাকে।
আরও পড়ুন – প্রশ্ন করতেই ‘জব্দ’ চ্যাটজিপিটি বা মেটা এআই, দিতে পারল না সঠিক উত্তর
বলা বাহুল্য, সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা মহাকাশের প্রথম চিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। ছবিগুলি বিশ্লেষণ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২ হাজারেরও বেশি গ্রহাণু ও লক্ষ লক্ষ গ্যালাক্সি শনাক্ত করতে পেরেছেন। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে আগে কখনো এরকম ক্ষীণ ও কম আলো বিচ্ছুরণকারী গ্রহাণুদেরকে শনাক্ত করা যায়নি। এর সঙ্গে বিজ্ঞানীরা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের অন্তর্ভুক্ত ট্রিফিড ও লেগুন নামের দুটি নিহারিকার ফোটো প্রকাশ করেছেন। চার ধরনের ফিল্টার এবং ৬৭৮টি পৃথক সাদাকালো ছবির সমন্বয়ে এই ফোটো তৈরি করা হয়েছে। মাত্র সাত ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে তোলা এই ছবিতে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকা নীহারিকার গ্যাস ও ধূলিকণার পুঞ্জীভূত মেঘের খুঁটিনাটি ধরা পড়েছে।