Brahma Kamal: সারা বছর ধরে অধীর অপেক্ষা। তুষারের চাদর সরে গিয়ে পাহাড়ে যখন ঘোর বর্ষা নামে, উপত্যকা জুড়ে তখন গজিয়ে ওঠে বুনো ফুলের বাহার। ফিনিক্স পাখির মত মাথা তুলে দাঁড়ায় শ’য়ে শ’য়ে বিরল প্রজাতির ফুল। এরই মাঝে, বর্ষার সময়, হিমালয়ের পার্বত্য উপত্যকায় ফোটে বিরল প্রজাতির ব্রহ্মকমল ফুল। তাও ক্ষণিকের জন্য এবং গভীর রাতের অন্ধকারে। খুব কম সময়ের জন্য ফোটায়, এই ফুলের দুর্লভ সৌন্দর্য্য দেখার মত সৌভাগ্য হয় হাতে গোনা কিছু মানুষের।
সূর্যমুখী গোত্রের ফুল হলেও, এর স্বভাব একেবারেই আলাদা। সারা বছরে এই ফুল ফোটে মাত্র একবার। তাও আবার কয়েক ঘণ্টার জন্য। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় ভোর রাতের দিকে উপত্যকা জুড়ে পাপড়ি মেলে এই ফুল। পূর্ণ বিকাশ হতে সময় নেয় দু’ঘণ্টারও বেশি। তবে সূর্য ওঠার আগেই আবার ঝরে যায় তার সৌন্দর্য্যের ছটা।
এই ব্রহ্মকমল ফুলকে ঘিরে জনমানসে ছড়িয়ে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী ও প্রচলিত বিশ্বাস। হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, দুর্লভ এই ফুল বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা প্রজাপিতা ব্রহ্মার প্রিয় ফুল। কথিত আছে, ব্রহ্মার চোখের জল থেকেই জন্ম হয়েছিল এই ফুলের। এই ফুলের ওপরেই নাকি অবস্থান করেন স্বয়ং ব্রহ্মা। প্রাচীন ঋকবেদেও ব্রহ্মকমলের উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেকের কাছে হিমালয়ের এই ফুল আধ্যাত্মিকতা, ভক্তি, পবিত্রতার প্রতীক।

বর্ষার মাঝামাঝি, জুলাই থেকে আগস্ট মাসে উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি ঢাল বেয়ে দেখতে পাওয়া যায় এই ফুল। ঘাঙ্গারিয়া থেকে হেমকুন্ড সাহিব যাওয়ার খাড়াই পথের দুদিকে চোখ রাখলে দেখা যায় অজস্র ব্রহ্মকমলের বাগান। ঘনঘোর বর্ষায় শ্যামল পার্বত্য উপত্যকা ছেয়ে যায় এই ফুলে।
ব্রহ্মকমলকে বলা হয় ‘রাতের রানি’। বছরে একবার মাত্র ফোটে এই ফুল। তাও আবার খুব কম সময়ের জন্য। তারপর ঝরে পড়ে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই ফুল ফোটার সাক্ষী থাকলে নাকি সৌভাগ্যলাভ হয়। পূরণ হয় মনের সব ইচ্ছা। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, যে বাড়িতে ব্রহ্মকমল ফোটে, সেখানে স্বয়ং লক্ষ্মী অধিষ্ঠান করেন। ফলে সেই গৃহে সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধির বিকাশ ঘটে।
ব্রহ্মকমলকে বলা হয় ‘সঞ্জীবনী ফুল’। পুরাণ অনুসারে, গণেশের মস্তক ছিন্ন হওয়ার পর দেবাদিদেব মহাদেব এই ফুলের জল ছিটিয়ে গণেশকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। জ্যোতিষ মতে, ব্রহ্মকমল দিয়ে ভগবান শিবকে পূজা করলে তৎক্ষণাৎ ফল মেলে এবং অশুভ শক্তি দূর হয়। কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথের মন্দিরেও এই ফুল সমর্পণ করে পূজা করা হয় শিব আর বিষ্ণুকে।
জানা যায়, ব্রহ্মকমল ফুলের পাঁপড়ির ভাঁজে লুকিয়ে আছে ঔষধি ক্ষমতা। ব্রহ্মকমল ফুলের নির্যাস বা নির্দিষ্ট অংশ ব্যবহার করে নিরাময় হয় অনেক জটিল রোগ। সাধারণ সর্দি, কাশি বা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি এই ফুলের ব্যবহার কার্যকর।