‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা: যুদ্ধের আবহে উত্তপ্ত পশ্চিম এশিয়া। অব্যাহত ইরান-ইজরায়েল সংঘাত। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পরস্পর বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এরই মধ্যে ইজরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে এসেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে। ইরানের সবথেকে সুরক্ষিত পরমাণু কেন্দ্র হল ‘ফোর্দো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’। মাটি থেকে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে এবং পাহাড়বেষ্টিত এই কেন্দ্রের সুরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই শক্তপোক্ত যে সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্র হানায় এই পরমানুকেন্দ্রের ক্ষতিসাধন করা একরকম অসম্ভব। এই ‘ফোর্দো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’ নিয়েই ইজরায়েলের যত চিন্তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, তেহরানের এই পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করার মত ক্ষমতা ইজরায়েলের নেই। রয়েছে আমেরিকার হাতে থাকা মহাশক্তিশালী ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বা এমওপি’র। আর সেকারণেই ‘বন্ধু’ আমেরিকার দারস্ত হতে পারে নেতানিয়াহুর সরকার।
কি এই ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা?
‘বাঙ্কার বাস্টার’ হল একটি শক্তিশালী বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমা বা ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বা এমওপি (Massive Ordnance Penetrator or MOP)। প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের (প্রায় ১৩,৬০৭ কিলোগ্রাম) এই বোমার পোশাকি নাম হল জিবিইউ-৫৭ এ/বি (GBU-57A/B)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির তলায় প্রায় ২০০ ফুট নীচে যেকোনো বাঙ্কার বা পরমাণু কেন্দ্রের মত শক্তিশালী পরিকাঠামোকে অনায়াসেই গুঁড়িয়ে দিতে পারে এই এমওপি। অপারমাণবিক বোমা হিসাবে এটিই সবথেকে ধ্বংসাত্মক শত্রু নিধনকারী বোমা। জানা যায়, মূলত পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ করার জন্যই এই ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) তৈরি করা হয়েছিল।
কতটা শক্তিশালী ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা?
বোয়িংয়ের ডিজাইন করা এই এমওপি-র বাইরে আছে অত্যন্ত কঠিন একটি এলগিন ইস্পাতের আবরণ। যে কারণে ভীষণ মোটা কোনো কংক্রিট বা পাহাড়ের দেওয়াল ভেঙে সহজেই আঘাত হানতে পারে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। বোমার বাইরের এই ইস্পাতের আবরণ বাঙ্কারে অনুপ্রবেশের সময় প্রচণ্ড চাপ সহ্য করতে পারে। ফলে, বোমার ভিতরের বিস্ফোরক অংশটি এই চাপ থেকে রক্ষা পায়। ‘বাঙ্কার বাস্টার’ এতটা শক্তিশালী হওয়ার কারণ হল এর পেলোড, অর্থাৎ বোমার ভিতরে পুঞ্জীভূত বিস্ফোরকের পরিমাণ। প্রায় ২৪০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরকে ঠাসা এই বোমার আঘাতে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে দুর্ভেদ্য কংক্রিটের ইমারত।
কাজ কিভাবে করে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ ?
নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানার জন্য এই বোমা অত্যাধুনিক জিপিএস (GPS) এবং ইনর্শিয়াল ন্যাভিগেশন সিস্টেম (INS) ব্যবহার করে। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি বাঙ্কার বাস্টারকে নিখুঁতভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যের একেবারে কাছাকাছি কয়েক মিটারের মধ্যে আঘাত হানতে সাহায্য করে।
কিভাবে বহন করা হয় এই বোমা?
যেকোনো যুদ্ধবিমানের সাহায্যে এমওপি বহন করা যায় না। এত ভারী বোমা বহন করা এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিক্ষেপ করতে গেলে চাই বিশেষ বিমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘বি-২ স্পিরিট’ স্টিলথ বোমারু বিমানই হল কেবলমাত্র সেই বিমান যা এমওপি বোমা বহন করে নিয়ে সঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। এই বিমানের বৈশিষ্ট্য হল এই যে, এটি খুব কম রাডারেই ধরা পড়ে। এমনকি, একসাথে দুটো ‘বাঙ্কার বাস্টার’ নিয়েও একটানা প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে।