ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় পাহাড়। কখনো তুষার ঢাকা মায়াবী রূপ তো কখনো আবার সবুজ শ্যামলা উপত্যকা। বিচিত্র রূপের হাতছানি উপেক্ষা করে এমন সাধ্যি কার। বরফ সরে পাহাড়ের গায়ে যখন বর্ষা নামে, তখন উপত্যকা ভরে যায় ফুলে। গজিয়ে ওঠে অসংখ্য প্রজাতির নাম না জানা ফুল। আর সেই রঙিন ফুলের বাগিচা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে পর্যটকের দল। ভারতের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন অনেক ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’। সুযোগ করে একবার বেরিয়ে পড়তে পারেন সেই রূপ উপভোগ করার জন্য। এই প্রতিবেদনে রইল সেরকমই একটি উপত্যকার সেরা ঠিকানা।
ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, চামোলি, উত্তরাখণ্ড
বুনো ফুলের পাহাড়ি উপত্যকার কথা বললে সর্বপ্রথম যে জায়গাটির কথা মনে আসে, তা হল উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চামোলি। উত্তরাখন্ড নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছবির মতো সাজানো একটি পাহাড়ি শহর। এখানকার ফুলের উপত্যকা আপনাকে মোহিত করবে। হিমালয়ের অত্যাশ্চর্য পটভূমি জুড়ে বিস্তৃত চামোলি যে কতটা সুন্দর হতে পারে, তা না দেখলে বোঝা যায় না।
চামোলির ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’ জাতীয় উদ্যান তৈরি হয়েছিল ১৯৮২ সালে। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান পাওয়া এই উদ্যানের বিস্তৃতি প্রায় ৮৭ বর্গ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে চামোলির উপত্যকায় প্রায় ৬০০ রকম প্রজাতির ফুল ফোটে। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল ব্রহ্মকমল, যা দেখার জন্য প্রতি বছর বহু পর্যটক ট্রেকিং করে এখানে আসেন। এই ট্রেকিং এর পথ কিন্তু খুব একটা সহজ নয়, অনেকটা পথ অতিক্রম করেই তবে আসতে হয়। বর্ষার সময় বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, পপি, প্রিমুলাস, গাঁদা, ডেইজি, অ্যানিমোনের মত ফুলে সেজে ওঠে ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’।
প্রায় সাড়ে তিন হাজার উচ্চতার চামোলি পার্বত্য উপত্যকা ধূসর ল্যাঙ্গুর, হিমালয়ান নেসেল, উড়ন্ত কাঠবিড়ালি এবং কালো ভাল্লুক, লাল শিয়াল ও তুষার চিতাবাঘের মত বিরল বন্যপ্রাণীর বাসস্থল।
জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ট্রেকিং এর রাস্তা খোলা থাকে এখানে। সেইমত এবছরও ১ জুন থেকে ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। নন্দা দেবী বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের মধ্যে অবস্থিত এই ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স পৌঁছতে গেলে পায়ে হেঁটেই যেতে হয়। গোবিন্দঘাট থেকে ঘাঙ্গারিয়া হয়ে একেবারে উপত্যকার প্রাণকেন্দ্র পর্যন্ত এই পার্বত্যভূমি ভ্রমণের নতুন অভিজ্ঞতা দেবে।