জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি জানায় গত বুধবার ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। তার পাল্টা জবাবে বৃহস্পতিবার ১৯৭২ সালে সাক্ষরিত শিমলা চুক্তি স্থগিত করল পাকিস্তান।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সভাপতিত্বে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে পাকিস্তান ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্থগিত করা সহ একগুচ্ছ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
বৈঠকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হিসাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তান ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বন্ধ করা হয়েছে ভারতীয়দের জন্য সার্ক ভিসায় ছাড়ের সুবিধাও। ভারতের পথে হেঁটে এসভিইএস স্কিমের আওতায় পাকিস্তানে থাকা ভারতীয়দের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে (শিখ তীর্থযাত্রী ব্যতিরেখে)।
সেই সঙ্গে ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমাও বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি, ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের সামরিক কূটনীতিকদের ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ বলে ঘোষণা করে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে ইসলামাবাদ।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এর আগে গত বুধবার একাধিক সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে ভারত। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয় সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি। বাতিল করা হয় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা। নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে আধিকারিকদের চলে যেতে বলা হয়। এছাড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দেশ ছাড়তেও বলা হয়। এই রকম পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার শাহবাজ শরীফের সরকার তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে।
সিন্ধু জনবন্টন চুক্তি
বৃহস্পতিবারের ঘোষণায় ভারতের সিন্ধু জনবন্টন চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ সমান বলে বিবৃতি দিয়েছে। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তান সিন্ধু এবং তার শাখানদীগুলোর ৮০ শতাংশ জল পেতো। এখন যদি সেই চুক্তি ভারত একতরফা ভাবে বন্ধ করে তবে তা চুক্তির পরিপন্থী বলে মনে করছে পাকিস্তান।
১৯৬০ সালের সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি ছিল ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে একটা বড় অধ্যায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে এই চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল করাচিতে। বুধবার ভারত যখন এই চুক্তি বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিল, তখনই বোঝা গিয়েছিল এই সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড়সড় প্রভাব ফেলতে চলেছে।
সিমলা চুক্তি
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের শেষে হিমাচল প্রদেশের শিমলায় ১৯৭২ সালে সাক্ষরিত হয় শিমলা চুক্তি। ভারতের তরফে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের তরফে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ভবিষ্যতে দু-দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথ নিশ্চিত করতে এই চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল।
এই চুক্তির মাধ্যমে লাইন অফ কন্ট্রোল (LOC)-এর সীমারেখা নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দিদের পাকিস্তানকে ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়া সৈন্য প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে সরাসরি আলোচনার অঙ্গীকারও করা হয় এই শান্তিচুক্তিতে। চুক্তিতে ঠিক হয়, ভারত বা পাকিস্তান কোনও দেশই একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণরেখা বদলের চেষ্টা করবে না। তবে এই শর্ত কোনোদিনই মানেনি পাকিস্তান।
পহেলগাঁও হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সম্পর্ক এখন অত্যন্ত স্পর্শকাতর পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। শান্তির যে সামান্য সেতুবন্ধন এতদিন টিকে ছিল, তাও এবার ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমানে পাকিস্তানের শিমলা শান্তি চুক্তি বাতিল করার অর্থ যে মারাত্মক হতে পারে তা বলাই বাহুল্য।