জম্মু এবং কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের উপর নৃশংস জঙ্গি হামলার জবাবে কঠোর বার্তা দিল ভারত। দীর্ঘ ছ’দশকের পুরনো ‘সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি’ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত সংযুক্ত সন্ত্রাসবাদ সমর্থন থেকে পাকিস্তান সরে না আসা পর্যন্ত ১৯৬০ সালে সাক্ষরিত এই চুক্তি স্থগিত থাকবে।
পাশাপাশি, এই হামলার জেরে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সমস্ত ভিসা বন্ধ করে দিল ভারত। বন্ধ করে দেওয়া হল পাকিস্তানিদের জন্য ‘সার্ক’ ভিসাও। আগে যে ভিসাগুলি দেওয়া হয়েছিল সেগুলোকেও বাতিল করা হয়েছে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আটারি-ওয়াঘা চেকপোস্টও। এছাড়া দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে নিযুক্ত সামরিক, বিমান ও নৌ উপদেষ্টাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে নয়াদিল্লি পাকিস্তান দুতাবাস থেকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনছে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে দেশের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠক শেষ হওয়ার পরেই বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পহেলগাঁওয়ের এই হামলায় একজন বিদেশী নাগরিক সহ ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। আহত হয়েছেন আরও অনেক। পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার প্রক্সি শাখা দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট এই হামলার পিছনে জড়িত আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু এবং কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেছিল।
বুধবার নয়াদিল্লি যে একাধিক কড়া সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো পাকিস্তানের সঙ্গে প্রায় ছ’দশকের পুরনো ‘সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি’ (Indus Water Treaty) স্থগিত করা। সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না হলে সিন্ধুর জল নিয়ে যে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এর আগে একাধিকবার জানিয়েছে ভারত।
১৯৬০ সালের সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি ছিল ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে একটা বড় অধ্যায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে করাচিতে এই চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক ছিল মধ্যস্থতাকারী। এই চুক্তি অনুসারে সিন্ধু ও তার উপনদীগুলোর জল ব্যবহারের জন্য দু-দেশের মধ্যে ভাগ করা হয়েছিল। ভারত পায় পূর্ব দিকের তিনটি নদী (রবি, বিপাশা এবং শতদ্রু), আর পাকিস্তান পায় পশ্চিম দিকের তিনটি (সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব )।
ভারত এতদিন এই নিয়ম মানলেও, বারবার সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পহেলগাঁওয়ের ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত যদি এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে তাহলে পাকিস্তান বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে পারে। এই সিদ্ধান্তে বাস্তব প্রভাব পড়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে। এই অঞ্চলের কৃষিকাজ মূলত এই জলেই ওপরেই নির্ভরশীল। ফলে শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, জল সরবরাহ বন্ধ হলে পাকিস্তানের কৃষি, খাদ্য এবং অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।