হিন্দুধর্মে, পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় ‘পিণ্ডদান’ করার রীতি আছে গয়ায়। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে গয়া তাই একটি পবিত্র তীর্থস্থান। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী ও পর্যটক পূণ্যলাভের আশায় গয়া আসেন। বিহারের ফল্গু নদীর তীরে অবস্থিত এই গয়া (Gaya) একটি ঐতিহাসিক শহর। তবে মোক্ষলাভের জন্য পরিচিত এই শহরের নাম আর ‘গয়া’ থাকছে না। পাল্টে গেল গয়া শহরের নাম। শুক্রবার বিহারের নীতীশ কুমারের সরকার গয়া শহরের এই নাম পরিবর্তনে সিলমোহর দিয়েছে।
গয়ার নতুন নাম কি?
গয়া শহরের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘গয়াজি’ (Gaya Jee)। শহরের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বকে সন্মান দিতেই এই নামের পরিবর্তন করা হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকার বাসিন্দাদের আবেগ আর সংস্কৃতিকে সম্মান জানাতে নামের এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গয়া শহরের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

গয়া বিহারের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও পর্যটন কেন্দ্র। হিন্দুধর্মের মানুষরা বিশ্বাস করেন এখানকার বিষ্ণুপদ মন্দিরে স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর পদচিহ্ন রয়েছে। শুধু হিন্দুধর্ম নয়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এই শহর একটি পবিত্র তীর্থস্থান। বলা হয়, এই শহরের কাছেই অবস্থিত বুদ্ধগয়ায় একটি বট গাছের নিচে বসে গৌতম বুদ্ধ বোধিলাভ করেছিলেন। এমনকি মগধ সাম্রাজ্যের অধীনে ‘গয়াজি’ একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। জানা যায়, সম্রাট অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পর এই শহরে আসেন এবং বুদ্ধগয়ায় একটি বুদ্ধমন্দির স্থাপন করেন।
এহেন ঐতিহাসিক শহরকে কেন্দ্র করে যে স্থানীয় মানুষের ভাবাবেগ থাকবে তা বলাই বাহুল্য।
হিন্দু ধর্মের একাধিক পুরাণেও গয়া শহরের নাম উল্লেখযোগ্যভাবে জায়গা পেয়েছে। কথিত আছে, সীতা আর ভাই লক্ষণকে সঙ্গে নিয়ে ভগবান রাম এখানে এসেছিলেন তাঁর পিতা দশরথের ‘পিণ্ডদান’ করতে। পুরাণ মতে, ত্রেতা যুগে গয়াসুর নামে এক অসুরের নামেই গয়ার নামকরণ হয়েছিল। এখানকার মানুষের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে মান্যতা দিয়েই এই নতুন নাম দেওয়া হয়েছে।
এর আগে অনেকবারই বিভিন্ন শহরের নাম পরিবর্তন করার নজির রয়েছে দেশে। এলাহাবাদ শহরের নাম পাল্টে রাখা হয়েছিল প্রয়াগরাজ; আবার দিল্লি যাওয়ার পথে মুঘলসরাই রেলস্টেশনের নাম বদলে রাখা হয়েছিল পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন। সেই তালিকায় এবার নতুন সংযোজন হল ‘গয়াজি’।
