‘নাটক দীর্ঘজীবী হোক’। ‘বিশ্ব নাট্য দিবস’-২০২৫ (ওয়ার্ল্ড থিয়েটার ডে) উপলক্ষে নয়াদিল্লির বঙ্গ সংস্কৃতি ভবনের মুক্তধারা পেক্ষাগৃহে ১৩ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক মনোজ্ঞ নাট্য উৎসব। উৎসবের আয়োজক ছিল ‘বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন’।
দীর্ঘকাল ধরে ‘বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন’ বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৫৮ সালে বাংলার তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী স্বর্গীয় ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই অ্যাসোসিয়েশনের পথ চলা। উদ্দেশ্যে ছিল বাংলার বাইরে থাকা বাঙালিদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা এবং তাদের বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শিকড়ের সাথে সংযুক্ত করা।
নাটকের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল একাধিক প্রতিষ্ঠিত ও নবাগত নাট্যগোষ্ঠী। ইচ্ছেবিতান, পুনশ্চ, ভূষণ অ্যামেচার, ড্রামা সোসাইটি আকৃতি, নবপল্লব চিলড্রেনস থিয়েটার, রুম থিয়েটার, বিকল্প, করোলবাগ বঙ্গীয় সংসদ, হরাইজনস, স্পটলাইট, প্রান্তিক আবাহন নাট্য গ্রুপ, সৃজনী সোসিও-কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, বিকল্প, চিত্তরঞ্জন পার্ক বঙ্গীয় সমাজ, আমরা ক’জন, দক্ষিণায়ন নাট্য গোষ্ঠী, নবপল্লী নাট্যসংস্থা, প্রারম্ভ, এবং যাপনচিত্র- এর মত নাট্যগোষ্ঠিরা তাঁদের নাটক পরিবেশন করে।

উৎসবের প্রতিটি নাটকের পরিচালনা, গল্প, সৃজনশীল অভিনয় ও মঞ্চনৈপুণ্য নাটাইপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছে। মঞ্চস্থ হওয়া নাটকগুলি মাধ্যমে উঠে এসেছে সমসাময়িক সমাজ, পরিবেশ, জীবন ও মানুষের নানান রঙ ও রূপ।
উৎসবে মঞ্চস্থ হওয়া নাটকগুলি সুদূরপ্রসারী বার্তা বহন করে। আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। দিনভর অনুষ্ঠিত হওয়া নাটকগুলির মধ্যে ছিল ‘বিদুষক’, ‘জীবিত না বিবাহিত’, ‘অ্যাপ’, ‘কপালের নাম গোপাল’, ‘ঠিক বলিনি?’, ‘মানুষের জন্য’, ‘বুঝতে দেরি’, ‘আত্মীয়’, ‘অসতোমা সদগময়ো’, ‘আলোর পথে’, ‘টক শো’, ‘অতভূত বিবাহ কথা’, ‘গোড়ায় গলদ’, ‘হিরো’, ‘উয়োম্যানিয়া’, ‘এ কি নির্বাসন?’, ‘আয়েষা’, এবং ‘নো অ্যাডমিশন’।

উৎসবে নাট্যপ্রেমীদের উচ্ছ্বাস ও উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত। উৎসাহী ন্যাট্যপ্রেমীদের ভিড়ে সকাল থেকে গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। দিনজুড়ে মুক্তধারা প্রেক্ষাগৃহ পরিণত হয়েছিল এক শিল্পসাহিত্যের মিলনস্থলে। একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার সাথে সাথে প্রকাশিত হচ্ছিল জীবনের বহুমাত্রিকতা। দর্শকরা প্রতিটি পরিবেশনার পরেই তাঁদের উচ্ছ্বাস ও প্রশংসায় ভরিয়ে দেন মঞ্চকে।
বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই নাট্য উৎসবটি থিয়েটারকর্মীদের জন্য এক বিরাট প্ল্যাটফর্ম। এই ধরনের উদ্যোগ কেবলমাত্র শিল্পীদেরকে মঞ্চে তাঁর নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয় না, পাশাপাশি উৎসাহী দর্শকদেরকেও তাঁর কাঙ্খিত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।
রাজধানীর বুকে বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, এবং ভবিষ্যতেও এমন নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, এই আশাই রাখেন নাট্যপ্রেমীরা।