‘Megaflash’ Lightning Bolt
পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই দীর্ঘতম বজ্রপাত। পরপর পাঁচটি রাজ্যের বিশাল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বজ্রপাত ‘মেগাফ্ল্যাশ’ হিসাবে সম্প্রতি নাম লিখিয়েছে ইতিহাসে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লুএমও) এর ঘোষণা অনুযায়ী এই ‘মেগাফ্ল্যাশ’ এখনো পর্যন্ত রেকর্ডকৃত সর্বাধিক দৈর্ঘ্যের বজ্রপাত (‘Megaflash’ Lightning Bolt) ।
তবে এই ঘটনা সাম্প্রতিক কালের নয়। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর এই বজ্রপাত আঘাত হেনেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মাত্র ৭ সেকেন্ডে এই বিদ্যুতের ঝলকানি অতিক্রম করেছিল ৫১৫ মাইল (প্রায় ৮২৯ কিলোমিটার)। আমেরিকার টেক্সাস থেকে শুরু করে ওকলাহোমা এবং আরকানসাস হয়ে মিসৌরির কানসাস শহর পর্যন্ত ছিল এর বিস্তৃতি। এত বিশাল অঞ্চল জুড়ে বজ্রপাত এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এতদিন পৃথিবীর সর্বাধিক দৈর্ঘ্যের বজ্রপাতের রেকর্ড ছিল ৪৭৭ মাইল (৭৬৮ কিমি)। তবে এবারের রেকর্ড করা এই ‘মেগাফ্ল্যাশ’ তাকেও ছড়িয়ে গেল।
The WMO has established a new world record for the longest lightning flash – an incredible 829 km (515 miles) in a notorious storm hotspot in the United States of America. Details: https://t.co/Wxw5ykNW39 pic.twitter.com/lwGQ34TqMH
— World Meteorological Organization (@WMO) July 31, 2025
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে ভূপৃষ্ঠে থাকা বজ্রপাত রেকর্ড করার জন্য যন্ত্রপাতিগুলি ততটা শক্তিশালী ছিল না। ফলে সুবিশাল এই বজ্রপাতের বিস্তৃতি যে ঠিক কতটা তা সেইসময় নিখুঁতভাবে গণনা করা সম্ভব হয়নি। তবে মার্কিন আবহাওয়া দপ্তর (এনওএএ), জিওএএস-১৬ নামক একটি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই ‘মেগাফ্ল্যাশ’-এর পরিধি এবং গঠন সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। বজ্রপাতের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করতে কিভাবে সম্ভব হয়েছে তাও তাঁরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন – কারোর কাছে এই শহর ‘বিশ্বের বিনোদন রাজধানী’, আবার কারোর কাছে ‘পাপের শহর’, এমনটা কেন?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বজ্রপাতের সময় এই জিওএএস-১৬ স্যাটেলাইট পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর নিক্ষিপ্ত আলোর ঝলকের ডেটা সংগ্রহ করেছিল। এই তথ্যকে তাঁরা পরে নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। উন্নত সফটওয়্যার অ্যালগরিদম ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ অন্যান্য আলোর ঝলকের মধ্য থেকে একটিকে আলাদা করেছেন এবং সেই শেষে বজ্রপাতের পুরো দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রবীণ লেখক র্যান্ডাল সার্ভেনি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আধুনিক ওয়েদার স্যাটেলাইটগুলিতে বজ্রপাত সনাক্তকরণের জন্য উন্নত এবং নির্ভুল ব্যবস্থা থাকে। তার সাহায্যেই এত বড় একটি বজ্রপাতকে সঠিক এবং নির্ভাভুলবে চিহ্নিতকরণ করা সম্ভব হয়েছে।” তিনি আরও জানান, ‘বর্তমানে কৃত্রিম উপগ্রহের উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে বজ্রপাত শুরু হওয়ার ঠিক কয়েক মিলিসেকেন্ডের মধ্যেই তা সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায় এবং কতদূর পর্যন্ত সেই তার বিদ্যুতরেখা অতিক্রম করেছে, তাও গণনা করা যায়।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয়, ঝড়ের উৎসস্থল থেকে অনেক দূরে গিয়েও বজ্রপাত তীব্র আঘাত হানতে পারে। ফলে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আবহাওয়াতেও ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ নেমে আসতে পারে। কয়েক শত কিলোমিটার দূরে বজ্রপাতের কেন্দ্রস্থল হলেও মুহূর্তের মধ্যে তা বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে দূরের কোন মেঘমুক্ত পরিবেশে।
তথ্যসূত্র- লাইভ সায়েন্স