কাশ্মীরের বিকল্প সেরা পাঁচ পর্যটন কেন্দ্রঃ বেশ কয়েক বছর ধরে ভূস্বর্গে জনসমাগম বেড়েছিল অনেকটাই। সচল হয়েছিল জীবনযাত্রা। কিন্তু হঠাৎই হল ছন্দপতন। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর আচমকা কাশ্মীর ভ্রমণের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে অনেকেরই। পর্যটকদের মনে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। তাই ইচ্ছা থাকলেও উপায় না পেয়ে কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে। আগে থেকে বুক করা টিকিট, হোটেল, গাড়ি সবটাই বাতিল করে দিয়েছেন অনেকেই।
বর্তমানে কাশ্মীর কার্যত পর্যটকশূন্য। ফলে প্রভাব পড়ছে পর্যটনেও। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অনেকেই ঘোরার মত বিকল্প জায়গা খুঁজছেন। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই গরমের ছুটিতে ভ্রমন পিপাসুদের তালিকায় উঠে আসছে উত্তরাখন্ড, হিমাচল, সিকিম, দার্জিলিং এবং দক্ষিন ভারতের শৈল শহরগুলির মত পর্যটন কেন্দ্রের নাম।
কাশ্মীরের পরিস্থিতি আবার করে স্বাভাবিক হবে, তা আন্দাজ করা কঠিন। তবে কাশ্মীরের জন্য মন খারাপ না করে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন অন্য ঠিকানায়। রইল সেরকমই সেরা পাঁচ পর্যটন কেন্দ্রের হদিস।
সেরা পাঁচ পর্যটন কেন্দ্রঃ মানালি (১/৫)

মানালি – পাহাড়্রে ঘোরার কথা বললে প্রথমেই মনে আসে মানালির কথা। ভারতের উত্তরে হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত মানালি অপুর্ব সুন্দর একটি পার্বত্য শহর। শহরের কোল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে খরস্রোতা বিপাশা নদীর উপত্যকা। স্থানীয় ভাষায় বিয়াস নদী। ওক, দেবদারু, পাইন গাছে মোড়া এই মানালি শহর আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রকৃতির বুকে আপনি খুঁজে পাবেন বরফ মাখা পাহাড় আর ধূসর হিমালয়ের সীমাহীন সৌন্দর্য। মানালি মানে শুধু বরফে হুটোপাটি খাওয়া নয়, নির্জন, নিশ্চুপ প্রকৃতিকে কাছে পাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মানালি। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, মানালির বিভিন্ন এডভেঞ্চার রাইড গুলিও আপনাকে আকর্ষণ করবে। মার্চ থেকে জুন ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর হল মানালি যাওয়ার উপযুক্ত সময়। এখানকার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলো হলো – বশিষ্ঠ মন্দির, হিড়িম্বা দেবী মন্দির, যোগিনী ফলস্, রোটাংপাস, সোলাঙ ভ্যালি ইত্যাদি ।
সেরা পাঁচ পর্যটন কেন্দ্রঃ আউলি (২/৫)

ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে সেরা হিল স্টেশন আউলি। তুষারে আবৃত উত্তরাখন্ডের এই পাহাড়ি এলাকা আপনাকে সুইজারল্যান্ড দেখাবে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২৫০৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই জায়গাটি পর্যটকদের, বিশেষ করে অ্যাডভেঞ্জার প্রেমীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি জায়গা। এখানকার কেবিল কার রাইড, অ্যাডভেঞ্চার রাইড, চোখ জুড়ানো পাহাড়ের দৃশ্য ট্যুরিস্ট আকর্ষনের অন্যতম কারন। যশীমঠ নরসিংহ মন্দির, আউলি লেক এখানকার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। এখানে ক্যাম্পিং করার সুবিধাও রয়েছে। এছাড়াও আছে স্কিলিং, স্নো বোটিং, টিউব রাইডিং এর মত রোমাঞ্চকর রাইড গুলি। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি হল আউলি যাওয়ার উপযুক্ত সময়।
সেরা পাঁচ পর্যটন কেন্দ্রঃ য়ুমথাং ভ্যালি (৩/৫)

গরমে কোথাও না তাকিয়ে সোজা উত্তর সিকিম। ডেসটিনেশন য়ুমথাং ভ্যালি, সিকিমের ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস। ঋতুর চক্রে আবর্তিত হয় য়ুমথাং উপত্যাকার রূপ। তুষার চাদরে ঢাকা উপত্যাকা, নদী আর উঁচু উঁচু শৃঙ্গ পরিণত হয় রূপকথার রাজ্যে। মরসুম বদলে সঙ্গে বদলে যায় তাঁর রূপ। প্রাণ ফিরে পায় রাশি রাশি তৃণের দল। উপত্যাকা জুড়ে ফুটে ওঠে সদ্যজাত ফুল। সেই দেখতেই ভিড় করে দূরদূরান্তের পর্যটকরা। একবার ঘুরে আসতে পারেন এখানে। প্রকৃতির অপরূপ শোভায় মন জুড়োবে।
সবুজ তৃনভূমিতে আচ্ছাদিত এই উপত্যকা ৩৫৬৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। রডোডেনড্রন ভরা এই পাহাড়ি উপত্যকাটি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ২৪ রকম প্রজাতির রডোডেনড্রন ফুলে ভরে থাকে। শীতে এখানে প্রচুর পরিমানে তুষারপাত হয়, তাই ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে য়ুমথাং। এখানকার উষ্ণ প্রস্রবন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, কস্তুরী হরিণ পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কারন। জিরো পয়েন্ট, লাচুং, শিংবা রডোডেনড্রন অভয়ারণ্য হল যুমথাং ভ্যালির অন্যতম উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। য়ুমথাং ভ্যালি এবং জিরো পয়েন্ট ঘুরতে গেলে থাকতে হবে লাচুংয়ে।
সেরা পাঁচ পর্যটন কেন্দ্রঃ মুন্নার (৪/৫)

‘দক্ষিন ভারতের কাশ্মীর’ নামে পরিচিত মুন্নার কেরালার মুথিরাপুরা, নল্লাথান্নি ও কুন্ডালা নামক তিনটি পার্বত্য নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত একটি শৈল শহর।। মুন্নার ভ্রমণে আপনি আবার নতুন করে প্রেমে পড়ে যেতে পারেন। অতুলনীয় নৈসর্গিক সৌন্দর্য, মুন্নারের পথে চলে যাওয়ার সময় দুপাশে বিস্তৃত চা বাগানের সুগন্ধ আপনাকে পাগল করবেই করবে।
মুন্নার ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। গ্রীষ্মকাল হলেও এখানকার আবহাওয়া এইসময় বেশ মনোরম থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৬০০ মিটার। দক্ষিন ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনাইমুদি পর্বতকে আপনি এখানেই খুঁজে পাবেন। এছাড়া, মুন্নারের বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান হল নির্ঝর জলপ্রপাত, মাত্তুপেট্টি, ইরাভিকুলম ন্যাশনাল পার্ক, পল্লিভাসল, চিন্নাকনাল চা মিউজিয়াম ইত্যাদি।
সেরা পাঁচ পর্যটন কেন্দ্রঃ তাওয়াং (৫/৫)

অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত তাওয়াং ভারতের অন্যতম সেরা একটি শৈল শহর। এটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১০২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের দেখা মিললেও এই শহরটিতে জনসংখ্যা খুবই কম। তাওয়াংয়ে ছোট-বড়ো মিলিয়ে প্রায় ১০৮ টি হ্রদ আছে। তাওয়াং মনাস্ট্রি এখানকার একটি প্রসিদ্ধ স্থান। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই মঠ ২৬ ফুট উঁচু বুদ্ধমূতির দেখা মেলে। এছাড়াও নুরানঙ্গা ফলস, যশোবন্ত গড় ওমাল মেমোরিয়াল, ষষ্ঠ দালাইলামার আশ্রয়স্থল গুম্ফা, তাওয়াং ওয়ার মেমোরিয়াল হল উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। তাওয়াং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হল মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর।