এমন গ্রামের নাম কখনো শুনেছেন যে গ্রামের কোনও বাড়িতে দরজা নেই? দরজা নেই বলে তালা লাগানোরও প্রশ্ন নেই। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, এই গ্রামে চুরি-ডাকাতির মত ঘটনাও ঘটেনি কোনোদিন। এমনকি, সাধারণ অপরাধও নয়। অপরাধের হার এখানে প্রায় শূন্য। ভারতের এক কোণে লুকিয়ে থাকা এই গ্রাম যেন অলৌকিক রূপকথার গল্প শোনায়।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, এই গ্রামেই ইউকো ব্যাংক দেশের প্রথম ‘লকবিহীন’ শাখা খুলেছিল ২০১১ সালে। ভারতের ব্যাঙ্কিং ইতিহাসে যা ছিল বিরল একটি উদ্যোগ। যদিওবা, পরবর্তীকালে সরকারি নিয়ম অনুসারে, ব্যাঙ্কের নিরাপত্তার জন্য যাবতীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সত্যিই এমন কোনো গ্রাম আছে? নাকি, নেহাৎ গুজব?
না, মোটেও গুজব নয়। এই গ্রামের নাম শনি শিংণাপুর। ভারতের পশ্চিমে মহারাষ্ট্র রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত একটি ছোট্ট জনপদ। বহু প্রজন্ম ধরেই এই গ্রামের বাসিন্দারা বাড়ির দরজা বানান না। কারণ এই গ্রামের মানুষরা বিশ্বাস করেন স্বয়ং শনিদেব তাঁদের সবকিছু রক্ষা করেন।
হিন্দুধর্মে শনিদেবকে ন্যায়বিচারের দেবতা হিসাবে পুজো করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস, যে অন্যায় করে, তাকে শাস্তি দিতে তিনি কখনো পিছপা হন না। এই বিশ্বাস এতটাই গভীর এই গ্রামবাসীদের মধ্যে যে, তাঁরা মনে করেন, শনিদেব নিজে রক্ষা করেন তাঁদের বাড়িঘর, সম্পত্তি এমনকি ন্যায়নীতিও। দেবতার ভয়ে কেউ চুরি করারও সাহস পায় না।

এই গ্রামে রয়েছে একটি প্রাচীন শনিদেবের মন্দির, যা ভক্তদের কাছে জাগ্রত স্থান হিসাবে পরিচিত। এখানে কোনো প্রতিমা নেই, বরং মাটির নিচ থেকে উঠে আসা এক বিশাল কালো পাথরকে ‘স্বয়ম্ভু’ রূপে পূজা করা হয়। দেবতার উপর অসীম আস্থা গ্রামবাসীদের।
কথিত আছে, বহু বছর আগে এক রাখাল ছেলে এই কালো পাথরটি মাঠে দেখতে পেয়ে খেলার ছলে তার গায়ে লাঠির আঘাত করেছিল। পাথরে আঘাত করা মাত্রই তার থেকে রক্তপাত শুরু হয়। সেই থেকেই শুরু এই বিশ্বাস। এরপর থেকেই গ্রামের কোনো বাড়িতে দরজা লাগানো হয় না। গ্রামের মানুষ সেই স্বপ্ন এবং বিশ্বাসকে আজও আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।
এই গ্রামে আজও পর্যন্ত পুলিশ বা থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হওয়ার নজির নেই। শুধু তাই নয়, জানা যায়, এই গ্রামের কেউ কখনো বৃদ্ধাশ্রমেও যাননি। পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন এতটাই গভীর যে মানসিক শান্তি যেন শনিদেবের আশীর্বাদে মিশে গেছে তাঁদের জীবনে।
শনি শিংণাপুরের এই মন্দিরটি জাগ্রত দেবস্থান বলে মনে করা হয়। গ্রামবাসীরা মনে করে স্বয়ং দেবতা এখনো এই মন্দিরে বিরাজ করেন। জাগ্রত এই দেবতাকে দর্শন করার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন গ্রামের এই মন্দিরে। অমাবস্যার পুণ্য তিথিতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়।

Author, CBulletin.com