Meteor Shower
ঘন্টায় অন্তত ২৫টি করে উল্কাপাত। আর ঠিক সেই সময় চাঁদও ঢাকা পড়বে অন্ধকারে। ফলে আকাশ জুড়ে বিরাজ করবে শুধুই অন্ধকার আর বিন্দু বিন্দু নক্ষত্ররাশি। এই নিকষ অন্ধকারে উজ্জ্বল আলোর দাগ কেটে ঝরে পড়বে একের পর এক উল্কা। এমন মহাজাগতিক দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য সবসময় কপালে জোট না। তবে ২৯ এবং ৩০ জুলাই রাতে পুরো পৃথিবী জুড়ে দেখা যাবে এই দৃশ্য। ভারত থেকেও মিলবে এর দেখা।
বলা বাহুল্য, দুটি মহাজাগতিক ঘটনার মিলনে এই উল্কাপাতের সংখ্যা এবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর, বিশেষ করে এই জুলাই মাসের শেষ দিনে উল্কাপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। একে বলে ‘সাদার্ন ডেল্টা অ্যাকোয়ারিডস’। ঘন্টায় প্রায় ২০টি উল্কাপাত হয় এইসময়। নাম থেকেই বোঝা যায়, দক্ষিন গোলার্ধ থেকেই এটি সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।
আরও পড়ুন – Avatar 3 Official Trailer: দেখুন জেমস ক্যামেরনের ‘অবতার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ ছবির অফিসিয়াল ট্রেলার
তবে এবার ‘সাদার্ন ডেল্টা অ্যাকোয়ারিডস’- এর সঙ্গে জুটি বেঁধেছে ‘আলফা ক্যাপ্রিকরনিডস’ নামের আর একটি উল্কাবৃষ্টি। সাদার্ন ডেল্টা অ্যাকোয়ারিডস এর তুলনায় এই উল্কাবৃষ্টি কিছুটা ফিকে হলেও দেখার সময় দুটিকে আলাদা করে শনাক্ত করা বেশ শক্ত। ৭ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সক্রিয় থাকে এই ‘আলফা ক্যাপ্রিকরনিডস’। তবে, ২৯ এবং ৩০ জুলাই রাতে এই উল্কাবৃষ্টি আরো সক্রিয় হয়ে উঠবে। ঘন্টায় ৫ থেকে ১০টি উল্কাপাত হতে পারে এর থেকে।
‘সাদার্ন ডেল্টা অ্যাকোয়ারিডস’-এর উল্কাগুলির উৎস হল আসলে ৯৬পি/মাখহোলজ ধূমকেতু। ১৯৮৬ সালে একজন অপেশাদার জ্যোতির্বিদ এটি আবিষ্কার করেন। সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে এই ধূমকেতুর সময় লাগে ৫.৩ বছর। এই প্রদক্ষিণকালে সে পৃথিবীর কক্ষপথে তার দেহের কিছু খণ্ডাংশ ফেলে রেখে যায়। সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী যখন সেই পড়ে থাকা অংশগুলোর জায়গায় এসে পড়ে, তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে খন্ডগুলো পৃথিবীর দিকে বিদ্যুৎবেগে ছুটে আসে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভিতর দিয়ে আসার সময় প্রচণ্ড ঘর্ষণে সেগুলি জ্বলে ওঠে। রাতের আকাশে ঝরে পড়া এই উল্কাপিন্ডগুলিকেই আমরা বলে থাকি তারা খসা।
আরও পড়ুন – What Happens After Death: ১ ঘণ্টার ‘সাময়িক মৃত্যু’, সেসময় নিজেই দেখলেন নিজের প্রাণহীন শরীরকে
একইরকমভাবে, ‘আলফা ক্যাপ্রিকরনিডস’ এর উল্কাগুলি হল ১৬৯পি/নিট নামক এক ধুমকেতুর অংশ। প্রতি ৪.২ বছরে এটি সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এই দুই উল্কাবৃষ্টি মিলেই ২৯ এবং ৩০ জুলাই গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ২৫টি উল্কাপাত দেখা যাবে।
উভয় উল্কাবৃষ্টির উৎস নক্ষত্রপুঞ্জ হল অ্যাকোয়ারিয়াস ও ক্যাপ্রিকর্নাস, যা দক্ষিণ আকাশেই ওঠে। এই কারণে দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে (যেমন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা) এই উল্কাবৃষ্টি সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে। তবে উত্তর গোলার্ধে, যেমন আমাদের দেশের যেকোনো স্থান থেকে যদি ৩০ জুলাই ভোরবেলা, সূর্য ওঠার আগেই দক্ষিণ আকাশের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায়, তাহলে মনোরম এই মহাজাগতিক আলোর বৃষ্টি দেখতে পাওয়া যাবে।
তবে আবহাওয়া ঠিক না থাকলে, কিম্বা দূষণের কারণে এই উল্কাবৃষ্টি ঠিকভাবে দেখা না যেতে পারে। শহরাঞ্চলের আকাশে কৃত্রিম আলোর দূষণের কারণে দৃশ্য ব্যাহত হতে পারে। তবে, শহর থেকে দূরে, কোনো গ্রামাঞ্চলের পরিষ্কার, দূষণমুক্ত আকাশে চোখ রাখলে এই উল্কাবৃষ্টি ভালোভাবে দেখা যাবে। এবং তা খালিচোখেই।