জেদের কাছে অবশেষে হার মানল কঠিন অসুখ। অস্থি ক্যানসারের মতো মারণ রোগও থামাতে পারেনি তাঁর এগিয়ে চলার ইচ্ছাকে। বরং জুগিয়েছে লড়াই করার শক্তি আর সাহস। বছরখানেক ধরে লড়াই করছেন মারনরোগ ক্যানসারের সঙ্গে। তা স্বত্বেও সদ্য প্রকাশিত ICSE দশম শ্রেনীর পরীক্ষায় ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়ে সাড়া ফেলে দিলেন বেঙ্গালুরুর নাগরভাভীর আরিয়ান প্রেসিডেন্সি স্কুলের ছাত্র চিরন্তন হন্নাপুরা (Chirantan Honnapura)। চিরন্তন শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশের কাছে অনুপ্রেরণার মুখ।
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই হঠাৎ ধরা পড়ে বিরল এই হাড়ের ক্যানসার- ‘হাই গ্রেড অস্টিওসারকোমা’। ডান হাতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে অসুখ। বন্ধ হয়ে যায় নিয়মিত ক্লাসে যাওয়া-আসা। শুরু হয় অস্ত্রোপচার। এর সঙ্গে চলতে থাকে কেমোথেরাপির একের পর এক ধাপ। ভাঙতে থাকে স্বাস্থ্য। দুর্বল হতে শুরু করে শরীর। কিন্তু মন থেকে এতটুকু হলেও দমেনি চিরন্তন। থামাতে পারেনি তাঁর পড়াশোনা। লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন সবসময়।
ছিল না কোনো প্রাইভেট টিউশন। হাসপাতালের বেডেই চিরন্তন শুরু করে দেয় সবরকমের প্রস্তুতি। নবম শ্রেণির পরীক্ষা দেন একজন রাইটারের সাহায্যে। পরিশ্রমের ফলাফল মেলে হাতেনাতে। একেবারে ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়ে ওঠেন পরের ক্লাসে। তবে সাফল্যের সঙ্গে দশম শ্রেণিতে উঠলেও, প্রথম তিন মাস বিশেষ ক্লাসে যোগ দিতে পারেন নি। তবু হাল ছাড়েনি চিরন্তন।

শিক্ষকদের সহায়তা, স্কুলের পাঠ্যক্রম এবং অনলাইন লাইভ ক্লাসই ছিল তাঁর ভরসা। ধৈর্য, নিষ্ঠা আর লক্ষ্য- এই তিন মন্ত্রে ভর করে চিরন্তন পৌঁছতে থাকে সাফল্যের সিঁড়িতে।
সদ্য ICSE পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরে নিজের স্বপ্নের কথাও জানিয়েছে চিরন্তন। একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে চিরন্তন বলেছেন, “আইন পড়তে চাই। তারপর UPSC-এর জন্য প্রস্তুতি নেব। আমার লক্ষ্য- একদিন আইপিএস অফিসার হওয়া। তাই পিইউসি-তে কমার্স নিয়েছি।”
চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে তাঁর পরিবার, শিক্ষক এবং বন্ধুদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছেন চিরন্তন। জানিয়েছেন, কঠিন সময়ে তাঁকে সবাই আশার আলো দেখিয়েছেন।
চিরন্তন হন্নাপুরা (Chirantan Honnapura) একটি উদাহরণ। তাঁর জেদ, অধ্যবসায় আর সাফল্য আরো একবার প্রমাণ করল, শরীর বাধা হয়ে দাঁড়ালেও লক্ষ্য আর চেষ্টা যদি ঠিক থাকে, ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনকিছুই অসম্ভব নয়।