কচি পাঁঠার ঝোল বলুন আর খাসির মাংসের ঝোল—এই গুটিকয়েক শব্দে লুকিয়ে আছে বাঙালির রসনাতৃপ্তি। রোববার দুপুরের পাতে সাদা ভাত, আলুভাজা আর ধোঁয়া ওঠা গরম গরম পাঁঠার মাংসের ঝোল- এই নস্টালজিয়ার কাছে বাঙালি বড়ই দুর্বল।
চেনা গন্ধ, গাঢ় বাদামি লালচে রং, আর মন পাগল করা জিভ জল আনা স্বাদ—সব মিলিয়ে এই পদ যেন শুধু খাবার নয়, লাগামহীন আবেগ।
বাঙালি পরিবারে পাঁঠার ঝোলের রেসিপির নানান পদ্ধতি প্রচলিত। সাধারণত এই রেসিপিতে সময় লাগে বড্ড বেশি। কম সময়ে রান্না করতে গেলেই আবার ঠিক সেই ব্যাপারটা আসেনা। তবে হাতে সময় কম থাকলে মনের মতন পাঁঠার মাংসও রান্না করা যায়। স্বাদে কিন্তু কোনও আপস নয়—বরং আরও বেশি গাঢ়, আরও বেশি জমাটি। কিভাবে? রইল সিবুলেটিনের তরফ থেকে বিশেষ প্রতিবেদন।

যেভাবে তৈরি করবেন এই সহজ ও অসাধারণ স্বাদের পাঁঠার মাংসের ঝোল
প্রথম ধাপ:
১ কেজি পাঁঠার মাংস ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এবার এতে মিশিয়ে দিন – একটি পেঁয়াজ কুচি, ১ টেবিল চামচ রসুনবাটা, ১ চা চামচ আদা বাটা, পরিমাণমতো নুন, ১ টেবিল চামচ কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো আর ১ চামচ হলুদ।
মশলাগুলি মাংসের সঙ্গে ভালো করে মাখিয়ে ম্যারিনেট করে ১০ মিনিট রেখে দিন।
দ্বিতীয় ধাপ:
প্রেসার কুকারে (২ লিটার) পরিমাণমতো সরষের তেল গরম করে নিন। তেল ধোঁয়া ছাড়তে শুরু করলে এর মধ্যে পরপর দিয়ে দিন—গোটা গরম মশলা (দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ), ২টি শুকনো লঙ্কা, ১ কাপ পেঁয়াজ কুচি, ২টি কাঁচা লঙ্কা, ১ চামচ রসুন বাটা, সামান্য একটু আদা বাটা, ১ চামচ বিরিয়ানি মশলা গুঁড়ো, ১ চামচ হলুদ গুঁড়ো আর ১ চামচ চিনি।
তেলে পেঁয়াজ কুচি লালচে বাদামি হয়ে এলে এর মধ্যে যোগ করুন একটি টম্যাটো কুচি। টম্যাটো ও মশলা ভালোভাবে মিশে গেলে ম্যারিনেট করা কাঁচা মাংস কুকারে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভালো করে কষিয়ে নিন।
তৃতীয় ধাপ:
এবার ফেটিয়ে রাখা ১০০ গ্রাম টক দই মাংসের মধ্যে দিয়ে দিন। মাংসের জল না শুকানো পর্যন্ত কষিয়ে নিন।

কষানো হয়ে গেলে ২ কাপ গরম জল কুকারে দিয়ে প্রেসার কুকারের ঢাকনা বন্ধ করে দিন এবং পরপর ৪টি সিটি দিন। গ্যাস বন্ধ করে ৫-৭ মিনিট অপেক্ষা করুন। প্রেসার নিজে থেকে কমে গেলে ঢাকনা খুলে দেখুন, যদি প্রয়োজনে একটু ফুটিয়ে নিয়ে নিন।
এই পদে আলুর অনুপস্থিতি অনেকের কাছে অসম্পূর্ণ মনে হতে পারে। চাইলে শুরুতেই হাফ করে কাটা আলু হালকা ভেজে আলাদা করে রাখুন, এবং প্রেসারে সিটি দেওয়ার আগে মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে দিন।
এইভাবে রান্না করা পাঁঠার মাংসের ঝোল একদিকে যেমন সময় সাশ্রয়ী, তেমনি স্বাদে অনন্য। কুকারের ভেতরেই মাংস সুন্দর করে সিদ্ধ হয়ে যায়, আর মশলার গন্ধ পুরো মাংসে মিশে যায় ভালোভাবে। একটিবার রেঁধে দেখলেই বুঝতে পারবেন, কতোটা সহজ উপায়ে আপনি তৈরি করতে পারেন আপনার রসনার প্রিয় এই পদটি।
গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন এই পাঁঠার মাংসের ঝোল—আর ফিরে যান সেই পুরনো দিনের রোববারের দুপুরের নস্টালজিয়ায়।