Friday, October 17

কেন দশমী তিথির নাম রাখা হল বিজয়া দশমী? এর নেপথ্যে রয়েছে কোন কাহিনী?

কেন দশমী তিথির নাম রাখা হল বিজয়া দশমী? এর নেপথ্যে রয়েছে কোন কাহিনী?
বিজয়া দশমী তিথি। প্রতীকী ছবি।

বিজয়া দশমী তিথি

শমী তিথির মধ্যে দিয়ে শেষ হয় দুর্গাপুজো। বরণ আর সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে দেবীকে এইদিন বিদায় দেওয়া হয়। এর মাধ্যমেই ঘটে শারদ উৎসবের পরিসমাপ্তি। ষষ্ঠী থেকে মহানবমী- দুর্গাপুজোর চারদিন যে কিভাবে কেটে যায় তা বোঝা যায় না। চোখের পলকে এসে হাজির হয় বিসর্জনের সুর। বিজয়া দশমী- এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির চিরন্তন আবেগ আর স্মৃতি। পুরাণ মতে, ঘরের মেয়ে উমা এই দশমী তিথিতে বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাসে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, কেন এই নামকরণ ? কেন দশমী তিথির নাম রাখা হল বিজয়া দশমী?

‘বিজয়’ শব্দের অর্থ হল ‘জয়লাভ করা’। কথিত আছে- এক সময় মহামায়া দুর্গা টানা নয় দিন নয় রাত ধরে মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর দশম দিনে মহিষাসুরকে বধ করেন। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির সেই বিজয় উৎসব হল বিজয়া দশমী। আরো ভালো করে বললে, অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে নারীশক্তির এই জয়লাভই হল বিজয়া দশমী। ‘বিজয়া’ কথাটির তাৎপর্য লুকিয়ে আছে সেই নারীশক্তিতেই।

অন্য একটি মতে, এই আশ্বিন মাসেই দশভূজা তাঁর চার সন্তানসন্ততিদের নিয়ে এই ধরাধামে আসেন। মা দুর্গা এখানে মহাশক্তি দুর্গতিনাশিনী নন। তিনি আমাদের ঘরের মেয়ে। একবছর পর মেয়ের বাড়ি ফেরার আনন্দে চারদিন আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন মর্ত্যবাসীরা। উৎসবের পঞ্চম দিনে, অর্থাৎ আশ্বিন মাসের শুক্ল দশমী তিথিতে দেবী দুর্গা পুনরায় তাঁর বাপের বাড়ি ছেড়ে যাত্রা করেন কৈলাসে তাঁর শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। এই দিনটিই বিজয়া দশমী হিসাবে পরিচিত।

আবার শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে মহামায়া দুর্গার আবির্ভাব ঘটেছিল। আর আশ্বিন মাসের শুক্ল দশমী তিথিতে দেবী অসুরবধ করেন। সেই ঐশ্বরিক জয়ের স্মৃতিতেই এই তিথি পরিচিত হয়ে আছে বিজয়া দশমী নামে।

এখানেই শেষ নয়। পুরাণ মতে আরও কাহিনী রয়েছে বিজয়া দশমী নিয়ে। বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতেই রামচন্দ্র মহাশক্তি মহামায়ার পূজা করে রাবণকে বধ করেছিলেন। উত্তর ভারতে এই দিনটি দশেরা উৎসব হিসেবে পালিত হয়। বাঙালি সমাজেও সেই সূত্রেই বিজয়া দশমীর প্রথা রয়ে গেছে।

বাংলা ও বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে তাই বিজয়া মানে নতুন সূচনা। যেখানে মৃন্ময়ী রুপী দেবী দুর্গা বিদায় নিলেও মানুষ ভোলে না সেইসব বিজয়গাথা। বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে চলে মিষ্টি মুখ, শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ বিনিময়। বিষাদের সুরের মাঝেও বিজয়া দশমী হয়ে ওঠে মানুষের মিলনক্ষেত্র।