‘ধুরন্ধর’ ছবির লিয়ারি শহর
সারা দেশ জুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রে রণবীর সিংয়ের ‘ধুরন্ধর’। সাম্প্রতিককালে বলিউডের কোন ছবি নিয়ে এত চর্চা একরকম বিরল। একইসঙ্গে ছবির বাস্তবধর্মী উপস্থাপনা এবং টানটান রাজনৈতিক আবহ দর্শকদের নজর কেড়েছে। পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে রীতিমত তাঁদের নাকের ডগায় ভারতের চরবৃত্তি করা দর্শককুলে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। ৫ ডিসেম্বর পেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই এই ছবির শ্যুটিং স্পট নিয়েও সমাজমাধ্যমে জোর আলোচনা চলছে। ছবিতে দেখানো করাচির লিয়ারি শহরের পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃশ্য, তার সংকীর্ণ অলিগলি, ঘিঞ্জি জনবসতি ও অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই বাস্তব আকার নিয়েছে যে ছবির শ্যুটিংস্পট নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই দর্শকদের মধ্যে। অনেকেই ভাবছেন, খোদ পাকিস্তান মুলুক ছাড়া এরকম শ্যুটিং সম্ভবই নয়। তবে বাস্তব কিন্তু তা বলছে না।
আসলে ‘ধুরন্ধর’ ছবির লিয়ারি শহরকে পাকিস্তানে শ্যুটই করা হয়নি। শুনতে অবাক হলেও এটাই বাস্তব। এমনকি এটি ভারতের কোনো শহরেও শ্যুট করা হয়নি। তবে ‘ধুরন্ধর’ ছবির নির্মাতারা এশিয়ারই একটি প্রসিদ্ধ শহরে নিপুণ হাতে তৈরি করেছেন অবিকল এই শহরকে। অসাধারণ শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন লিয়ারির রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং স্থানীয় সংস্কৃতিকে। নির্মাতাদের হাতে কিভাবে একটি নকল লিয়ারি জীবন্ত হয়ে উঠল, সে এক অবাক হওয়ার কাহিনী।
‘ধুরন্ধর’ ছবির লিয়ারি শহর হল আদতে ৬ একরের একটি বিস্তৃত ছবির সেট। নির্মাণ করা হয়েছে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরে। ছবির প্রোডাকশন ডিজাইনার সাইনি এস. জোহরে এবং তার টিমের অসাধ্য সাধনে তৈরি হয়েছে ৬ একরের এই বিশাল সেট। যেখানে পাকিস্থানে লিয়ারির অলিগলি, ভিড় এবং আঞ্চলিক আবহ জীবন্ত হয়ে উঠেছে বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে। মাত্র ২০ দিনে প্রায় ৫০০ জনেরও বেশী ভারতীয় এবং থাই কর্মীদের সহায়তায় তৈরি হয়েছে সিনেমার লিয়ারি শহর। এই কাজে থাইল্যান্ডের স্থানীয় শিল্পী ও শ্রমিকদের পাশাপাশি ভারতীয় টেকনিকাল টিমও যুক্ত ছিল। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পাকিস্থানের লিয়ারি শহরের দৃশ্যগুলি ফুটিয়ে তোলা মোটেই সহজ ছিল না। তাহলে সম্ভব কিভাবে হল?
শহরকে দর্শকের চোখে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কাজের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত শিল্পী থেকে কর্মীরা এই শহরের সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য প্রথমে সংগ্রহ করেন। সংবাদপত্র প্রতিবেদন, ইউটিউব ভিডিও, পুরোনো পাকিস্তানি চলচিত্র ঘেঁটে শহরের চরিত্র কেমন হবে তাঁরা বোঝার চেষ্টা করেন এবং সেইমত তার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেন। তারপর শুরু হয় শহরকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ। নকল শহর তৈরি করতে শহরের প্রত্যেকটি অবয়বের উপর খুব যত্ন সহকারে নজর দেওয়া হয়। এমনকি জানালার গ্রিল থেকে দেওয়ালের টেক্সটার পর্যন্ত। শুধুমাত্র ভিজ্যুয়াল নয়, সেটে আলোর ব্যবহার, রঙের টোন পর্যন্ত কোনো কিছুই এড়ায়নি তাঁদের চোখ থেকে।
আরও পড়ুন – ফিরে দেখা: ২০২৫ সালের সেরা ১০টি বলিউড সিনেমা
থাইল্যান্ডে এই সুবিশাল সেট তৈরির কারণ হিসেবে নির্মাতারা উল্লেখ করেছেন যে, পাকিস্থান বা ভারতে প্রকৃত লিয়ারির মতো পরিবেশ তৈরি করা কঠিন হত এবং বাস্তবে বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হত। প্রথমে সেটটি মুম্বইতে তৈরি করার পরিকল্পনা থাকলেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য শেষপর্যন্ত তা ভেস্তে যায়। একটি বিশেষ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জোহরে একথা স্বীকার করেছেন। অনেকগুলি দেশে তল্লাশির পর অবশেষে থাইল্যান্ডকেই ছবির নির্মাতারা লিয়ারির জন্য আদর্শ স্পট হিসাবে বেছে নেন।
লিয়ারির দৃশ্য ছাড়াও, পুরো ধুরন্ধর ছবির শ্যুটিং ভারতের একাধিক এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গল্পের প্রয়োজনে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির, মুম্বাইয়ের ফিল্মিস্তান স্টুডিও, লুধিয়ানার খেরা ভিলেজ এবং লাদাখ সহ বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে ছবির শ্যুটিংয়ের কাজ। সব মিলিয়ে একাধিক স্থানের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ‘ধুরন্ধর’-এর বাস্তব জগৎ।
বিশ্লেষকদের মতে, দর্শকরা যদি মনে করেন দৃশ্যগুলি সত্যি সত্যই লিয়ারিতে শ্যুট করা হয়েছে, তাতেই নির্মাতাদের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য। অন্য দেশে বসে, নিখুঁতভাবে লিয়ারির মতো এত সংবেদনশীল এলাকা ও জটিলতা তুলে ধরা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। ‘ধুরন্ধর’-এর পক্ষে সেই চ্যালেঞ্জ তাই এককথায় সফলই হয়েছে। এই নির্মাণ কৌশল আরও একবার ফের প্রমাণ করে যে, পর্দার আড়ালে কিভাবে আধুনিক ‘বলিউডি প্রযুক্তি’ ও শিল্প নৈপুণ্য ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে বাস্তবকে নতুন করে গড়ে তুলছে।
সব ছবি- সংগৃহীত
আরও পড়ুন – ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে শহীদ হন এই বীর সেনা, তাঁকে নিয়েই ধর্মেন্দ্রর শেষ ছবি ‘ইক্কিস’
আরও পড়ুন – ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে মুক্তি পাচ্ছে কোন কোন সিনেমা?



