সাইয়ারা ছবির সাফল্যের কারণ
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে এ বছরের অন্যতম হিট হিন্দি ছবি ‘সাইয়ারা’। বলিউডে রোমান্টিক ঘরানার ছবির ইতিহাসে ফের আলোড়ন তুলেছে এই ছবি। ছবি মুক্তি পাওয়ার প্রথম সপ্তাহ যেতে না যেতেই বক্স অফিসে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছে এই ছবি। ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে ২০০ কোটির ক্লাবে। পরিচালক মোহিত সুরি আবারও প্রমাণ করেছেন, প্রেম, আবেগ আর তারকা মুখ ছাড়াও দর্শকদের মন জয় করা যায়। সুরি এর আগেও ‘আশিকী ২’, ‘এক ভিলেন’-এর মত হিট ছবি উপহার দিয়েছেন বলিউডকে। তবে অনেকে মনে করছেন, এই ছবি ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আশিকী ২’ ছবির ছায়া ছাড়া আর কিছু নয়। পুরোনো ছবির আবেগকে নতুন করে ফিরিয়ে এনে বাজিমাত করেছেন তিনি।
তবে শুধু কি তাই?
‘সাইয়ারা’ মূলত একটি অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী। যেখানে বাস্তব চিত্র ও আবেগের সংঘর্ষকে নিখুঁত বুননে গড়া হয়েছে। বর্তমান সময়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন, ভাঙন এবং পুনর্মিলন এমন ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা অত্যন্ত সহজেই দর্শকের মনকে জয় করে নিয়েছে। ‘সাইয়ারা’ সিনেমায় নায়ক নায়িকা হিসেবে নতুন মুখ হলেও অভিনয়ের দক্ষতা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। দর্শকের ছোট ছোট অনুভতির জায়গাগুলি বুঝে তারা এত ভালো কাজ করেছে যে পরিণত অভিনেতার অভাবটা বোঝাই যায় নি। বিশেষ করে এই ছবির শেষ দৃশ্য, যেখানে চোখে জল না এনে উপায় নেই।

‘সাইয়ারা’ ছবি ‘আশিকী ২’-এর ধাঁচে তৈরি হলেও এই ছবি আরও বেশি আধুনিকতায় মোড়া। এই ছবি হল এই প্রজন্মের ছবি। পুরো ছবি জুড়ে এই প্রজন্মের কথা বলে গেছে। তাদের ইচ্ছে, আশা, হতাশা, চেপে রাখা কষ্টকে এই প্রজন্মের সাথে মিলিয়ে দিয়েছে। পরিশ্রম আর প্রতিভা উপর দাঁড়িয়ে কৃষের বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখা আর অন্যদিকে বাণীর চুপচাপ বাঁচতে চাওয়া কোথাও গিয়ে যেন ধূসর সীমানায় গিয়ে মিশে গেছে। যে জগতে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা টিকে থাকতে চাইলেও টিকে থাকতে পারে না। যে পৃথিবীতে এরা বেঁচে থাকতে চায়, সেই পৃথিবীকেই এরা ঠিক করে চিনে উঠতে পারে না। ‘আশিকী ২’ এর মতনই এই ছবিতে আছে সর্ম্পকের অপূর্ণতা আর ত্যাগ। তবে তুলনা করলে এই গল্পের চরিত্র গুলো অনেক বেশি পরিণত। গল্প বা প্লট আরও বাস্তব ঘেঁষা। এই ছবি বলা যায় ‘আশিকী ২’-কে পরবর্তী ধাপে নিয়ে চলে গেছে।
মোহিত সুরির অন্যান্য ছবির মতোই, ‘সাইয়ারা’ ছবির সঙ্গীত একদিকে যেমন আবেগপ্রবণ, তেমনি ফেলে আসা স্মৃতির মত। হারিয়ে গেলেও কাছে থাকার মত। ‘সাইয়ারা’ ছবির গানই হল এই ছবির প্রাণ। মোহিত সুরি এই সুরগুলি সংগ্রহ করেছেন অনেক বছর ধরে। ছবির গান সবসময়ই ছবির সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় নি। এই ছবির প্রত্যেকটি গান, প্রত্যেকটি সুর যেন এক একটি কবিতার লাইন। দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এই গান ও সুর ছবির আবহকে করেছে আরো গভীর।
‘সাইয়ারা’ একটি রোম্যান্টিক ড্রামা ঘরানার ছবি। প্রেম, আবেগ ও গান- এই সহজ অথচ চিরাচরিত তিন উপাদানের সমন্বয় দক্ষ পরিচালকের হাতের জাদুতে অনবদ্য হয়ে উঠেছে। মোহিত সুরি ‘আশিকী ২’-এর ধাঁচে এই ছবি তৈরি করেছেন ঠিকই, কিন্তু তার থেকেও বড় কথা প্রজন্ম, সংস্কৃতি আর ভাষাভেদে সেই ছবিকে অনুভব করার উপযোগী করে উপস্থাপন করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন – Ahaan Panday and Aneet Padda: ‘সাইয়ারা’ জ্বরে কাঁপছে গোটা দেশ, এই মুভির নতুন জুটিকে কতটা চেনেন?
এই ছবির ট্রেলার এবং প্রমোগুলি এই ছবির সাফল্যের ভিত্তি ছবি মুক্তির আগেই তৈরি করে দিয়েছিল। এই দুই তরুণ-তরুণীর পরিচয় কি? কিভাবে তাঁরা ভালোবাসল একে অপরকে? কি এমন তাদের এত গভীর ভাবে ভেঙ্গে দিয়েছিল? তাদের মধ্যে আর কি কখনো দেখা হয়েছিল? এতসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই প্রজন্মকে পেক্ষাগৃহে টেনে এনেছিল।
আসলে ‘সাইয়ারা’ হল সম্পূর্ণ একটি প্রেমের ছবি। ‘সনম তেরি কসম’ কিম্বা ‘ভীর-জারা’-র মত ব্যর্থ প্রেমের কাহিনী। যার শুরু থেকে শেষ পুরোটাই নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে উপভোগ করার মতন। তবে কিছু গভীর প্রশ্ন বা অনুভুতি থেকেই যায়। যা আমাদেরকে এই ছবি দেখার অনেকদিন পরেও মন খারাপ করতে শেখায়, বাস্তব কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে শেখায়, এবং সর্বোপরি আমাদের কাছের মানুষটিকে নতুন করে চিনতে শেখায়।