কুমারী পূজা
দুর্গাপুজোয় কুমারী পূজা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত দুর্গাপুজোর অষ্টমী এবং নবমীর যে কোন একদিন ১৬ বছরের কম বয়স্কা কোন কুমারীকে দেবীরূপে পুজো করার প্রচলন রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই এই পুজো করার রীতি চলে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, দেবী দুর্গা যিনি সধবা রূপে পূজিতা হন, তাঁর আরাধনার মধ্যে কুমারী পূজা কেন বা কিভাবে জুড়ে গেল? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে শাস্ত্র ও পৌরাণিক অ্যাখ্যানে।
বানাসুরের কাহিনী
শাস্ত্রে নারীশক্তিকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। দেবীপুরাণে বর্ণিত আছে, প্রাচীনকালে অসুররাজ বানাসুর স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে দেবতাদের উপর প্রবল অত্যাচার শুরু করেছিল। দেবতারা অসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেবী মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবগণের আর্তি শুনে দেবী প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি কুমারীরূপে আবির্ভূত হয়ে এই দানবকে বিনাশ করবেন। অবশেষে দেবী এক কিশোরী রূপে আবির্ভূত হয়ে বানাসুরকে বধ করেন। কুমারী রূপী মহাশক্তির সামনে টিকতে পারেনি অসুররাজ। বানাসুরের মৃত্যুতে অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে শুভ শক্তির জয় হয়। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই দুর্গাপুজোর সময় কুমারী পূজার প্রচলন হয়।
কুমারী পূজার তাৎপর্য
শাস্ত্রমতে, নারীশক্তির মধ্যে নিহীত আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তিন মৌলিক শক্তি- সৃষ্টি, পালন ও ধবংস। কুমারী হলেন সেই নারীশক্তির প্রথমাবস্থা। কুমারী হল প্রকৃতির নিষ্কলুষ প্রতীক। প্রাচীন মুনি-ঋষিরা মনে করতেন, একজন কুমারীর মধ্যেই দেবীভাব সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়। তাই তাঁকেই দেবী রূপে পূজা করলে মহাশক্তির আরাধনা সম্পূর্ণ হয়।
কুমারী কন্যা পবিত্রতার প্রতীক। কুমারী পূজার প্রচলন তাই সেই বিশ্বাস থেকেই জন্মলাভ করেছে। নিষ্পাপ শিশুকন্যাকে দেবী হিসেবে মান্য করা আসলে নারীশক্তির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায়। স্বামী দিব্যানন্দের মতে, কুমারী পূজার ‘সহজ সরল ব্যাখ্যা হল সকল নারীকে ভগবতী বুদ্ধিতে দেখা; শুদ্ধাত্মা কুমারীতে যেহেতু ভগবতী সত্তার বেশি প্রকাশ, তাই কুমারীপূজা’।
১৬ কন্যার নাম
কুমারী পূজায় বিভিন্ন বয়সের কন্যাকে বিভিন্ন নামে পুজো করা হয়। এক বছরের কুমারীর নাম হল সন্ধ্যা, দু-বছরের কন্যার নাম সরস্বতী, তিন বছরের ত্রিধামূর্তি, চার বছরের কালিকা, পাঁচ বছরের সুভগা, ছ বছরের উমা, সাত বছরের মালিনী, আট বছরের কুঞ্জিকা, নয় বছরের কালসন্দর্ভা, দশ বছরের অপরাজিতা, এগারো বছরের রুদ্রাণী, বারো বছরের ভৈরবী, তেরো বছরের মহালক্ষ্মী, চোদ্দো বছরের পীঠনায়িকা, পনেরো বছরের ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরের কুমারীর নাম হল অম্বিকা। বৈদিক ও পৌরাণিক যুগ থেকে দেবী এই নাম আর কুমারী রূপে পূজিত হয়ে আসছে।
কুমারী পূজার শুভ সময়
কুমারী পূজার নির্দিষ্ট কোন শুভ সময় নেই। মহা অষ্টমী এবং নবমী তিথির যে কোন দিন কুমারী জ্ঞানে দেবীর পুজো হয়। পঞ্জিকা এবং স্থান ভেদে বিভিন্ন নিয়মের মধ্যে দিয়ে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।