নতুন কিছু বলতে গিয়ে পুরনো জিনিসকে জোড়াতালি দিলে যা হয়, ঠিক তেমনটাই হয়েছে ‘Jewel Thief – The Heist Begins’ সিনেমায়। বড়সড় বাজেট, পরিচিত মুখ, দুনিয়া জোড়া লোকেশন আর একটি বিশাল হীরে- সবকিছু মিলে আগে থেকেই কুকি গুলাটি ও রবি গ্রেওয়াল পরিচালিত এই ছবিকে ঘিরে ভালোরকম প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই হেইস্ট থ্রিলার দাঁড়াল শুধুই চকচকে প্যাকেটে মোড়া ছেঁড়া গল্পের পুঁটলির মতো।
যে কোনো হেইস্ট থ্রিলারে দর্শক থ্রিল ছাড়া গল্পের গতি আর টুইস্ট প্রত্যাশা করে। আর যদি সেই ছবিতে সইফ আলি খানের মতো অভিনেতা থাকেন, তাহলে প্রত্যাশা স্বাভাবিক ভাবেই আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আফসোসের বিষয়, “Jewel Thief – The Heist Begins” শুরুতে অনেক কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষমেশ কেবল গ্ল্যামার দেখিয়েই খালি হাতে ফেরালো।
ছবির প্লট

ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন প্রতারক ও হীরা চোর রেহান রায় (সইফ আলি খান)। হিংস্র ও ক্ষমতালোভী আর্ট কালেক্টর রাজন আওলাখ (জয়দীপ আহলাওয়াত) রেহানকে বাধ্য করে এক বিপজ্জনক হেইস্টে নামতে। মুম্বইয়ের একটি জাদুঘর থেকে ৫০০ কোটি টাকার ‘রেড সান’ হীরা চুরি করতে নামে রেহান। এর মধ্যেই রেহানের জীবনে আসে রাজনের স্ত্রী ফারাহ (নিকিতা দত্ত), নিঃসঙ্গ, নির্যাতিতা আর দাম্পত্যজীবনে আটকে পড়া এক নারী। এদিকে পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স অফিসার বিক্রম মেহতা (কুনাল কাপুর) রেহানের খোঁজে মরিয়া। রেহান কি পারবে একদিকে আওলাখ আর অন্যদিকে বিক্রমকে বোকা বানাতে? নাকি আটকে পড়বে তাঁদের জালে। গল্পের এই চেনা টেমপ্লেটে অসংখ্য টুইস্ট আর শুটিং লোকেশনের বাহাদুরি থাকলেও কোথাও গিয়ে যেন চরিত্রগুলোর সঙ্গে ছবির গল্প খিচুড়ি পাকিয়ে গেছে। সাসপেন্স গুলো আগে থেকেই আলগা হয়ে যায়। বোঝা যায় কি ঘটতে চলেছে।
চিত্রনাট্য
ছবির সবচেয়ে দুর্বল দিক সম্ভবত চিত্রনাট্য। চেনা ছাঁচে ঢালা চরিত্র, অপ্রয়োজনীয় সাবপ্লট সিনেমার গল্পকে অনেকটাই হাস্যকর করে তুলেছে। একটা প্লেনের মধ্যে হীরার হেইস্ট, ফেক পাসপোর্ট দিয়ে শহরে ঢোকা, বারবার আওলাখ আর বিক্রমের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকা, মাঝআকাশে ডাক্তার সেজে অপারেশন করা- সবকিছু মিলিয়ে এমন সব ‘twist’ দেখানো হয়েছে যা এক সময় আমাদেরকে রেহানকে অতিমানব হিসাবে ভাবতে বাধ্য করে ।
চরিত্র
সইফ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ২০০৮-এর ‘রেস’ কিম্বা ২০০৪-এর ‘এক হাসিনা থি’-র মত সেই আমেজ খুঁজে পাওয়া যায় নি। তার চরিত্রে আবেগের জায়গা থাকলেও অভিনয়ে নিস্প্রভ ছাপ ছিল স্পষ্ট। নিকিতা দত্তকে ঠিকমতো সুযোগই দেওয়া হয়নি। আর কুনাল কাপুর? অফিসার বিক্রম মেহতার চরিত্রটা যেন লিখতেই ভুলে গেছে চিত্রনাট্যকার। ছবিতে একমাত্র জয়দীপ আহলাওয়াতকেই স্ব-মহিমায় থাকতে দেখা গেছে। যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন তিনি। চেনা ইমেজের ভিলেনের ছাঁচে হলেও, নিজের স্টাইল দিয়ে ছবির ভারসাম্য অনেকটাই রক্ষা করেছেন ‘পাতাললোক’ সিরিজের ‘হাতি রাম চৌধুরী’।
নজর কাড়ল
তবে এসব ছাড়াও ছবির মধ্যে ছোট ছোট কিছু মুহূর্ত খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে পরিচালক কুকি গুলাটি ও রবি গ্রেওয়াল বিনোদনের স্বাদ দিতে পেরেছেন। বিশেষ করে যারা ‘ধুম’ বা ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’-এর ঘরানার ছবি দেখতে ভালবাসেন, তাঁরা নিশ্চই এই ছবিতে রোমাঞ্চ খুঁজে পাবেন। স্টাইলিশ, ফাস্ট-পেসড, অ্যাকশন প্যাকড মুভি হিসাবে ভালই লাগবে। চিত্রগ্রহণ আর লোকেশন হিসাবে বুদাপেস্ট, ইস্তানবুল আর মুম্বই তো নজর কাড়বেই।
সব মিলিয়ে, ‘Jewel Thief – The Heist Begins’ হল একটা নতুন মশলায় পুরনো একটা রেসিপি। চেনা উপাদান, চেনা টুইস্ট, চেনা প্রেম-প্রতারণা আর ভিলেন-হিরোর চিরাচরিত দ্বন্দ্ব। পার্থক্য শুধু এটাই, এ বার সেই রেসিপিতে যুক্তি আর আবেগ অনেকটাই বাদ পড়েছে।
