Friday, October 17

কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে নিজেই করে নিন লক্ষ্মী পুজো, জেনে নিন দেবীর পুজো করার নিয়ম

কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে নিজেই করে নিন লক্ষ্মী পুজো, জেনে নিন দেবীর পুজো করার নিয়ম
নিয়ম মেনে নিজেই করা যায় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। গ্রাফিক- সিবুলেটিন ডট কম।

লক্ষ্মী পুজোর নিয়মরীতি

গামীকাল ৬ অক্টোবর কোজাগরী পূর্ণিমা তিথি। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের এই শেষ পূর্ণিমা তিথিতে বাংলার অধিকাংশ হিন্দু পরিবারে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। শারদোৎসবের পর এই পুজো বাংলায় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো হিসাবে পরিচিত। কোজাগরী শব্দের অর্থ হল ‘কো জাগতি’ অর্থাৎ ‘কে জেগে আছো’। বিশ্বাস করা হয়, এইদিন রাতে মা লক্ষ্মী গৃহস্থের বাড়ি ঘুরে ঘুরে তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদ করেন। তাই গৃহে মায়ের পদার্পণের অপেক্ষায় রাত জেগে পুজো করাই এই লক্ষ্মী পুজোর প্রচলিত রীতি। বাঙালি হিন্দু ঘরে সারাবছর বৃহস্পতিবার দেবী লক্ষ্মীর পুজো করা হলেও কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীর আরাধনার গুরুত্ব আলাদা। বৃহস্পতিবারের পুজো সকাল থেকে করা হলেও কোজাগরের লক্ষ্মী পুজোর প্রকৃষ্ট সময় হলো প্রদোষকাল। কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে অধিকাংশ হিন্দু বাড়িতে পুজো হওয়ায় পুরোহিতের আকাল দেখা যায়। তাই নিরুপায় হয়ে নিজেকেই করে নিতে হয় দেবীর আরাধনা। তবে সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে পুজো করতে হয়।

শাস্ত্র অনুসারে, পুজো শুরু থেকে সমাপন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম।

কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর নিয়ম


কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার নিয়ম
দেবী লক্ষ্মী- প্রতীকী ছবি।

 

১) নিজে লক্ষ্মীপুজো করতে গেলে প্রথমে স্নান সেরে শুদ্ধ বসন পরে তবেই পুজোতে বসা উচিৎ। পুজোর সূচনায় সর্বপ্রথম নিজের ও পরিবারের সকল সদস্যের মাথায় গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিতে হয়। তাতে পবিত্র হয় পুজোর জায়গা।

২) আগে পুজো করার জায়গায় এবং বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে আলপনা এবং মা লক্ষ্মীর পা এঁকে নিন। আলপনা আঁকতে খড়িমাটি ব্যবহার করতে পারেন।

৩) এরপর পুজোর স্থানে আসন পেতে বসে নারায়ণকে মনে মনে স্মরণ করে পুজো শুরু করুন। লক্ষ্মীপুজো শুরুর আগে শ্রী নারায়ণকে স্মরণ করতে হয়।

৪) পুজো যেখানে করছেন সেখানে একটি তামার পাত্রে জল নিয়ে সূর্যদেবকে অর্পণ করুন। কারণ তিনিই সর্বশক্তির উৎস। পুজো শুরুর আগে তাঁকে জল দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তামার পাত্রে জল ঢালার সময় সূর্যদেবের নাম উচ্চারণ করুন।

৫) ঘট স্থাপনের জন্য মাটির একটি গোল ডেলা করে তার উপর ঘট বসাতে হয়। ঘটের সামনে কিছু ধান ছড়িয়ে দিয়ে সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে দিন। ঘটে গঙ্গাজল ভরে তার উপর বিজোড় সংখ্যার আম্রপল্লব রেখে দিন। পাতার উপরে হরিতকী, ফুল, দূর্বা, কলা ইত্যাদি রেখে ঘট সাজিয়ে নিন।

৬) ঘট স্থাপনের পর দেবীকে ধ্যানমন্ত্রে প্রণাম করতে হয়। আহ্বান মন্ত্র পাঠ করে দেবীকে নিজগৃহে আহ্বান করুন। লক্ষ্মীর পাঁচালীর মধ্যে এই মন্ত্র খুঁজে পাবেন। যদি না পান তাতেও অসুবিধা নেই। হাত জোড় করে চোখ বুঝিয়ে মনে মনে বলুন- এসো মা, আমার গৃহে প্রবেশ করো, আমার এই সামান্য আয়োজন তুমি গ্রহণ করো।

৭) এরপর লক্ষ্মীদেবীর পুজোর দ্রব্যগুলো একে একে নিবেদন করার নিয়ম। ঘটের পাশে আঁকা মায়ের পদচিহ্নে জল দিয়ে মায়ের পা ধুয়ে নিন। তারপর দুর্বা, আতপ চাল ও ফুল দিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করুন।

8) দেবীকে চন্দন ও সিঁদুর পরানোর পর মালা, ফুল অর্পণ করুন। ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে পরপর দেখান এবং শেষে নৈবেদ্য উৎসর্গ করুন। লক্ষ্মীপুজোর ভোগে ফলের সঙ্গে নাড়ু, মুড়কি, খিচুড়ি, লাবড়া ও মিষ্টি রাখুন।

৯) এরপর হাত জোড় করে ফুল নিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিন এবং প্রণাম করুন। পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র লক্ষ্মীর পাঁচালীতে পাবেন।

১০) এরপর নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা, ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুল এবং দেবী লক্ষ্মীর পেঁচকের উদ্দেশ্যে একটি ফুল নিবেদন করুন। সবশেষে দেবীকে প্রণাম করে ‘লক্ষ্মী পাঁচালী’ পাঠ করে পুজো সম্পূর্ণ করুন।

শাস্ত্র অনুযায়ী, লক্ষ্মী পুজোয় কিছু বিষয় একেবারেই নিষিদ্ধ।

পূজায় লোহা বা স্টিলের বাসন ব্যবহার করা যায় না। মনে করা হয়, লোহা অলক্ষ্মীর প্রতীক।

লক্ষ্মীপুজো করার সময় কাঁসর ঘণ্টা বাজানোও নিষিদ্ধ। তাই পুজোর সময় শুধু শাঁখ বাজান।

দেবীর ঘটে তুলসীপাতা দেওয়া অনুচিত। তবে নারায়ণকে তুলসী অর্পণ করুণ।

ঘটের পাশে লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকবেন।

পুজো শেষে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে শ্রী নারায়ণকে নিবেদন করে প্রণাম করুন।

এইগুলি সাধারণ নিয়ম। তবে অনেকে বাড়িতে এছাড়াও নানারকম নিয়মের মধ্যে দিয়ে লক্ষ্মী পুজো করা হয়। সেক্ষেত্রে পরিবারের নিয়ম মেনে লক্ষ্মী পুজো সম্পন্ন করুন।