ওয়্যারলেস চার্জার
বিদ্যুৎ মানেই আমরা বুঝি তারের জট। তা সে মোবাইল চার্জিং হোক বা টেলিভিশনের পিছনে তারের গোঁজামিলই হোক। তবে সময় বদলেছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে তারের উপর নির্ভরতা ধীরে ধীরে কমে আসছে। এখন তারবিহীন বিদ্যুৎ বা ওয়্যারলেস পাওয়ার ট্রান্সমিশন আর কারোর অজানা নয়। তারের মাধ্যমে সরাসরি সংযোগ ছাড়াই ইলেকট্রনিক ডিভাইসে পৌঁছে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। ফলে অনেক সহজ এবং ঝক্কিবিহীন হচ্ছে চার্জিং প্রক্রিয়া। ফলে স্বাভাবিক কারণেই বর্তমানে ওয়্যারলেস চার্জার-এর প্রতি ব্যবহারকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। ল্যাপটপ বা ফোনের চর্জিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ওয়্যারলেস চার্জার। কিন্তু কিভাবে কাজ করে এই চার্জার? এই প্রযুক্তির পিছনে রয়েছে কোন আবিষ্কার? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
ওয়্যারলেস চার্জিংকে পোশাকি ভাষায় ইন্ডাকটিভ চার্জিং নামেও পরিচিত। এই প্রযুক্তিতে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে চার্জযুক্ত কণার মাধ্যমে শক্তি স্থানান্তরিত হয়। পরে সেই শক্তি আবার বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তার ছাড়াই বিদ্যুৎ প্রবাহের এই ধারণার প্রথম উদ্ভাবক ছিলেন নিকোলা টেসলা। ১৮৯০ সালে তিনি প্রমাণ করেন, বিদ্যুৎ পরিবহনে তার বা ওয়্যার অপরিহার্য নয়। তিনি ‘টেসলা কয়েল’ ব্যবহার করে দেখান যে দুটি তামার কুণ্ডলী (কয়েল) ব্যবহার করে একটি কুণ্ডলী থেকে অন্য কুণ্ডলীতে ইলেকট্রিক চার্জ স্থানান্তর করা সম্ভব। প্রাইমারি কয়েলে প্রচুর পরিমানে চার্জ জমা হলে তা একটি নির্দিষ্ট ফাঁকা অংশ বা গ্যাপ অতিক্রম করে সেকেন্ডারি কয়েলে পৌঁছায়। অনুরণন নামে একটি শর্ত অর্জনের নীতির উপরেই এটি কাজ করে। আর সেখানেই তৈরি হয় বজ্রপাতের মতো বিদ্যুৎ নির্গমন।
ওয়্যারলেস চার্জার কিভাবে কাজ করে?
টেসলার এই আবিষ্কার ছিল যুগান্তকারী। তবে তার বাণিজ্যিক প্রয়োগ হতে সময় লেগে যায় প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি। ওয়্যারলেস চার্জার ‘টেসলা কয়েল’ নীতির উপর কাজ করে। আজকাল ঘরে বসে যে স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ কিংবা ইয়ারবাড চার্জ করা যায় কোনো তার ছাড়াই, তা সেই আবিষ্কারেরই ফল। তবে প্রযুক্তিটি ব্যবহারের ধরন নির্ভর করে শক্তি কত দূর পর্যন্ত পাঠানো হচ্ছে তার ওপর। স্বল্প দূরত্বে যেমন স্মার্টফোন বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট চার্জিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় চৌম্বক ক্ষেত্র। দূরবর্তী প্রয়োগে, যেমন মহাকাশে শক্তি প্রেরণের ক্ষেত্রে, ব্যবহৃত হয় মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি, যা পোশাকি ভাষায় ‘পাওয়ার বিমিং’ নামেও পরিচিত।
ওয়্যারলেস চার্জার-এর প্যাডের উপর বা খুব কাছাকাছি (প্রায় ৪৫মিমি দূরত্বে) স্মার্টফোন রাখলে, তখন মূলত দুটি কয়েল একসাথে কাজ করে- ট্রান্সমিটার কয়েল এবং রিসিভার কয়েল।
ট্রান্সমিটার কয়েল চার্জিং প্যাডের ভিতরে থাকে, আর রিসিভার কয়েল থাকে মোবাইলের ভিতর সাধারণত ব্যাটারির পাশে।
চার্জিং প্যাডটিকে বাড়ির ইলেকট্রিক বোর্ডের সঙ্গে সংযোগ করলে প্যাডের ভিতরের ট্রান্সমিটার কয়েলের মধ্যে দিয়ে অল্টারনেটিং কারেন্ট বা এসি কারেন্ট প্রবাহিত হয়। এই এসি কারেন্টই প্যাডের চতুর্দিকে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করে।
এখন, চার্জিং প্যাডের উপর স্মার্টফোন রাখলে ওই ফোনের ভিতরে থাকা রিসিভার কয়েল ওই চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে চলে আসে। তখন এই চৌম্বকক্ষেত্র ফোনের কয়েলে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন ঘটায়- অর্থাৎ, কোনো তার ছাড়াই সেখানে একটি ভোল্টেজ তৈরি করে।
ফোনের সার্কিট এই ভোল্টেজকে পরে ডাইরেক্ট কারেন্ট বা ডিসি কারেন্টে পরিণত করে। যার ফলেই চার্জ হয় ফোনের ব্যাটারি।