Extrasolar Planet News: ছোট্ট একটি নক্ষত্রকে ঘিরে চক্কর কাটছে দৈত্যাকার একটি গ্রহ। মহাকর্ষজ বলের সমস্ত নিয়মকানুনকে অবজ্ঞা করে যেন অলৌকিক কায়দায় তৈরি হয়েছে গ্রহ নক্ষত্রের সম্পর্ক। পৃথিবী থেকে প্রায় ২৪০ আলোকবর্ষ দূরে খোঁজ মিলেছে এমনই একটি দৈত্যাকার গ্রহের যে নিজের আয়তনের তুলনায় অতি ছোট এক নক্ষত্রের কক্ষপথে অনবরত প্রদক্ষিণ করে চলেছে। যা বাস্তবে রীতিমত ‘অসম্ভব’। মহাজাগতিক অসঙ্গতির এমন দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে সত্যিই বিরল।
বিজ্ঞানীদের মতে, এত ক্ষুদ্র নক্ষত্রের কক্ষপথে সাধারণত এত বড় গ্রহ প্রদক্ষিণ করতে পারে না। কিন্তু এমনটাই তো হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা চিলি, আমেরিকা ও ইউরোপের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথভাবে এই বিস্ময়কর ঘটনা আবিষ্কার করেছেন।
যে বামন নক্ষত্রকে ঘিরে এই বিশাল গ্রহটি আবর্তন করছে তার নাম হল টিওআই-৬৮৯৪ (TOI-6894)। আকারের দিক থেকে এই নক্ষত্রটি সূর্যের মাত্র এক পঞ্চমাংশ। আর একে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে টিওআই-৬৮৯৪বি (TOI-6894b) নামের একটি দৈত্যাকার এক্সোপ্ল্যানেট, যার আকার প্রায় আমাদের সৌরমণ্ডলের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনির থেকেও বড়। সৌরজগতের বাইরের যে কোন গ্রহকে এক্সোপ্ল্যানেট (Extrasolar Planet অথবা Exoplanet) বলা হয়। এখন মজার বিষয় হল, নতুন এই গ্রহটি পৃথিবীর মত নিরেট নয়। বৃহস্পতি বা শনি গ্রহের মত জমাট বাঁধা ধূলিকণা আর ঘনীভূত গ্যাসের পিন্ড। যে কারণে এই গ্রহটি ওজনে খানিকটা হালকা। উপরন্তু, নক্ষত্রের খুব কাছে থাকা সত্বেও এর তাপমাত্রা মোটে ৪২০ কেলভিন, গ্যাসীয় গ্রহ হিসাবে যা বিরল।
আরও পড়ুন –
বর্ষায় বন্ধ হচ্ছে সুন্দরবন, তিন মাস পর্যটকরা যেতে পারবেন না জঙ্গলে
বস্তুত, গ্রহের উৎপত্তি সম্পর্কে এতদিন বিজ্ঞানীরা যা জানতেন, তার ভিত্তি ছিল ‘কোর অ্যাক্রিশন থিয়োরি’। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, গ্রহ সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থায় নক্ষত্রকে ঘিরে প্রথমে একটি ছোট গ্রহাণু বা কেন্দ্র তৈরি হয়। তারপর সেটি ধীরে ধীরে গ্যাস এবং ধূলিকণা সংগ্রহ করে ক্রমশ বড় আকার নেয় এবং একসময় বিশাল গ্যাসীয় গ্রহে পরিণত হয়। কিন্তু সমস্যা হল, কম ভরযুক্ত নক্ষত্রদের চারপাশে সাধারণত এত গ্যাস ও ধূলিকণা থাকে না, যার ফলে বিশাল গ্রহ গঠনের সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব বললেই চলে। অথচ নতুন আবিষ্কার হওয়া এই দানব গ্রহ বিজ্ঞানীদের সেই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ বা টেস-এর চোখে ধরা পড়েছে গ্রহ-নক্ষত্রের এই অদ্ভুত জুটি। লিও নক্ষত্রপুঞ্জের বাসিন্দা এই নক্ষত্রটি আসলে এক ‘লাল বামন’। যার মানে হল, ছোট, ক্ষীণ এবং প্রায় জ্বালানি-শেষ হয়ে যাওয়া নক্ষত্র।