দুশ্চিন্তার মেঘ নিয়ে ছুটে আসছে অকেজো উপগ্রহ। প্রায় ৫০ বছর আগে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল সোভিয়েত মহাকাশযান ‘কসমস ৪৮২’। উদ্দেশ্যে ছিল পৃথিবীর পড়শী গ্রহ শুক্রে অনুসন্ধান করা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই অভিযান বাস্তবে সফল হয়নি। অকেজো হয়ে মহাকাশেই গর্ভেই হারিয়ে গিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই মহাকাশযান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এতদিন পর সেই ‘কসমস ৪৮২’ আবার ফিরে আসছে পৃথিবীর দিকে। মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের ধারণা আগামী ১০ মে-র মধ্যে কসমস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারে। তার অনিয়ন্ত্রিত গতি আঘাতও হানতে পারে পৃথিবীর বুকে।
১৯৭২ সালের ৩১ মার্চ উৎক্ষেপণের পর কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ে রকেটে। ফলত, শুক্রের পথে না এগিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথেই আটকে পড়ে কসমস। পরবর্তী সময়ে এই কক্ষপথ সে আর ত্যাগ করতে পারেনি। পৃথিবীর কক্ষপথে বন্দী থাকা অবস্থায় কসমসের মূল শরীর চার টুকরোয় ভাগ হয়ে যায়। এর মধ্যে গোলাকার অবতরণ মডিউলটি, যার ওজন প্রায় ৫০০ কেজি বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আসছে।
নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এখন কসমসের সেই অবতরণ মডিউল পৃথিবীর কক্ষপথ ধরে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামছে। কক্ষপথ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এগিয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এটিকে দ্রুত টেনে আনছে বলে জানা যাচ্ছে।আর এখানেই বিপদের সংকেত পাচ্ছেন ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই।

শুক্রের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব অনেক বেশি। ফলে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় কসমসকে প্রচন্ড চাপ ও তাপ সহ্য করতে হত। শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদানই হল কার্বন ডাই অক্সাইড (৯৬ শতাংশ)। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের চেয়ে যা প্রায় 93 গুণ বেশি। এই কারণে, শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলের চাপ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি। এই সব বিষয় মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিল কসমস ৪৮২- কে, যাতে সে সহজে শুক্রে পৌঁছতে পারে। কসমসের ল্যান্ডার মডিউল এই কারণেই খুব শক্তিশালী করে তৈরি করা হয়েছিল।
কসমসের এই শক্তিশালী গঠনের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রবেশ করার সময় মডিউলটি অনেকাংশে অক্ষত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, যদি মহাকাশযানের অবতরণ মডিউলটির হিট শিল্ড সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে এটি বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময়েই ভেঙে পড়বে। আর যদি কসমসের হিট শিল্ড অক্ষত থাকে, তাহলে সেটি ধাতব একটি বড় টুকরো হিসেবেই পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়তে পারে। তখন এর গতি হবে ঘণ্টায় প্রায় ২৪০ কিলোমিটার, যা মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
কোথায় আছড়ে পড়তে পারে কসমস ৪৮২?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর ৫১.৭ ডিগ্রি উত্তর থেকে দক্ষিণ অক্ষাংশের ম ধ্যে যেকোনও একটি স্থানে এটি আছড়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, টোকিও থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ মহাসাগরে আচ্ছাদিত হওয়ার জন্য, কসমসের অবতরণ জলের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ এমন অনিয়ন্ত্রিত পুনঃপ্রবেশের ঘটনা আগেও ঘটেছে। চীনের লং মার্চ রকেট কিংবা স্পেসএক্সের ধ্বংসাবশেষও অতীতে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে।
এই মুহূর্তে বিভিন্ন দেশের মহাকাশ সংস্থাগুলি কসমস ৪৮২-কে নজরে রাখছে। কোথায় এবং কখন এটি আঘাত হানবে তা এখনও যদিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তার গতিপথ আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।