রথের গায়ে আঁকা থাকে এই পটচিত্র, কোন শিল্পীদের কাজ জানা আছে?

জমজমাট পুরীর সমুদ্র শহর। রথের দড়িতে একবার টান দিতে ভিড় জমিয়েছেন লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ। 

এই রথগুলি শুধুমাত্র আকারেই বড় নয়, এদের নির্মাণশৈলী ও কারুকার্য অনন্য শিল্পকলার নিদর্শন। 

পুরীর রথের গায়ের কারুকার্য এবং নকশা অত্যান্ত সমৃদ্ধ ও বিস্তারিত। বিশেষভাবে নির্মিত এই রথের গায়ে শিল্পীরা তাঁদের শিল্পকলা ফুটিয়ে তোলেন।

বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি, পৌরাণিক কাহিনীর দৃশ্য এবং নানান অলঙ্করণে অপরূপ সাজে সেজে ওঠে রথের কলেবর। 

রথের শৈল্পিক এই কারুকার্য ভারতীয় স্থাপত্য ও চিত্রকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। বছরের পর বছর ধরে অভিজ্ঞ শিল্পী ও কারিগরদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও শিল্পস্বত্বা লুকিয়ে থাকে রথের গায়ে। 

শ্রীক্ষেত্র পুরীর রথের গায়ের নকশায় জড়িয়ে আছে ঠিক তেমনি এক শিল্পকলার ইতিহাস। 

পুরীর অনতিদূরেই আছে রঘুরাজপুর নামে ছোট্ট একটি গ্রাম। সব মিলিয়ে ১২০ থেকে ১৩০ টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। 

পুরী থেকে রঘুরাজপুর যেতে সময় লাগে মোটে আধঘন্টা। শিল্পপ্রেমীদের স্বর্গ এই গ্রাম পটচিত্র অঙ্কনশৈলীর জন্য বর্তমানে হেরিটেজ ভিলেজের তকমা পেয়েছে।  

১০

তাল আর নারকোল গাছ দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট গ্রাম রূপকথাকেও হার মানায়। রাস্তার দুধার বেয়ে প্রতিটা বাড়ির দেওয়ালে আঁকা ছবি আর নকশা দেখে মনে হয় এ সত্যিই এক শিল্পগ্রাম। 

১১

জগন্নাথ মন্দিরের চালচিত্রে , নানান পৌরাণিক কাহিনীর অলঙ্করণে এই চিত্রশিল্প ব্যবহৃত হয়। মুলত কাপড়ের ওপর তুলি আর প্রাকৃতিক রঙে আঁকা হয় এই পটচিত্র।

১২

রঘুরাজপুরের পটশিল্পে জড়িয়ে আছে রামায়ণ, মহাভারত, কৃষ্ণলীলা, চৈতন্য চরিতামৃত ও জগন্নাথ লীলার কাহিনী। রঙের জন্য ব্যবহার করা হয় শঙ্খের গুড়ো, পাথর ও ভুসোকালি সহ নানান প্রাকৃতিক উপাদান। 

১৩

পটচিত্র ছাড়াও এখানকার কাগজের মণ্ডের তৈরি পুতুল, নারকেলমালার ওপরে আঁকা ছবি, মুখোশ, ছোট সুপুরির গায়ে আঁকা চিত্র, তালপাতার চিত্র অনন্য শিল্পকলার পরিচয় বহন করে।

১৪

শোনা যায়, স্নানযাত্রার পর জগন্নাথ, বলভদ্র আর শুভদ্রা যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন ভক্তরা আর তাঁদের দেখা পান না। সেই সময় ভক্তদের দর্শনের জন্য ভগবানের বস্ত্রের উপর ছবি আঁকার প্রচলন হয়। এটাই রঘুরাজপুরের পটচিত্র। 

১৫

লোককথা অনুসারে এই গ্রাম থেকেই বিখ্যাত ওড়িশি নৃত্যের উৎপত্তি হয়েছিল। নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মও এই রঘুরাজপুর গ্রামে। 

Next Story